মৃত সুদীপ্তা বিশ্বাস (ইনসেটে)। ভেঙে পড়েছেন মৃতার পরিজনেরা (নীচে)। শুক্রবার কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র
স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে অটোতে লরির ধাক্কায় মৃত্যু হল এক ছাত্রীর। আর এক ছাত্রী গুরুতর জখম অবস্থায় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি।
শুক্রবার বিকালে টালিখোলা এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, মৃত ছাত্রীর নাম সুদীপ্তা বিশ্বাস (১৩)। বাড়ি কোতায়ালি থানার চকদিগনগর নিমতলাপাড়ায়। দিগনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল সে। পিঙ্কি দেবনাথ নামে তার এক সহপাঠী গুরুতর আহত হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্কুল ছুটির পর ষষ্ঠ শ্রেণির তিন পড়ুয়া অটোয় চেপে বাড়ি ফিরছিল। সেই সময় টালিখোলায় পিছন দিক থেকে আসা একটি লরি সেটিকে ধাক্কা মারে। অটোর চালক ও তিন পড়ুয়া রাস্তায় ছিটকে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, পিছন থেকে আসা লরির চাকার নীচে পড়ে যায় সুদীপ্তা। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিঙ্কি এবং অটো চালককে উদ্ধার করে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পিঙ্কি আপাতত সেখানেই চিকিৎসাধীন। লরির চালক, মুর্শিদাবাদের বেলেডাঙা-সারগাছি এলাকার বাসিন্দা রাজীব শেখকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। লরিটি আটক করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, লরিটি উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থেকে বীরভূমের রামপুরহাট যাচ্ছিল পাথর আনতে। জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের পরে দিগনগরের রাস্তা এখন খুবই ভাল। যে কারণে খালি লরিটি জোরেই আসছিল। পুলিশকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অটোটিও বেশ জোরেই আসছিল। টালিখোলায় জাতীয় সড়ক থেকে অটোটি গ্রামের রাস্তায় ঢোকার জন্য ডান দিকে ঘুরতেই পিছন থেকে লরিটি এসে ধাক্কা মারে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জেনেছে, অটো চালক কোনও আগাম সঙ্কেত না দিয়েই আচমকা ডান দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়ায় লরিটি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি।
এখন প্রশ্ন উঠছে: অটোটি কেন জাতীয় সড়ক দিয়ে যাচ্ছিল? অটোর কি জাতীয় সড়ক দিয়ে যাতায়াতের অনুমতি আছে? যদি তা না থাকে তা হলে কী ভাবে দিনের পর দিন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে অটো যাতায়াত করছে?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিগনগর থেকে টালিখোলা, কয়া-মইলকা, নাদুরিয়া হয়ে গ্রাম্য রাস্তা দিয়ে বাদকুল্লা পর্যন্ত অটো যাতায়াত করে। সেই অটোতেই স্কুলে যাতায়াত করত সুদীপ্তা। দিগনগর থেকে টালিখোলা পর্যন্ত প্রায় আধ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক ধরে এসে টালিখোলা থেকে গ্রামের রাস্তায় ঢোকে অটো। নদিয়া জেলার অতিরিক্ত আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক অনুপম চক্রবর্তী বলছেন, “অটো কোনও ভাবেই জাতীয় সড়কে উঠতে পারে না। আমরা সেই অনুমতি দিতে পারি না।” তা হলে কী করে দিনের পর দিন জাতীয় সড়কে অটো চলছে? আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক বলেন, “এ ক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।”