প্রতীকী ছবি।
বাবা দিন মজুর করে আমাদের দুই ভাই আর এক বোনকে বড় করেছে। চাষের কাজ না থাকলে রাজমিস্ত্রির সঙ্গে দিন মজুরের কাজ করেছে। কিন্তু রাজমিস্ত্রিদের সারা বছর কাজ পেতে অসুবিধা হয় না। কিছু না কিছু কাজ করেই থাকে। আমার লেখাপড়াতে তেমন মাথা ছিল না, আবার আর্থিক ভাবে স্বচ্ছলও ছিল না আমাদের পরিবার। তাই ষষ্ট শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর বাবার পাশে দাঁড়াতে আমি রাজমিস্ত্রির সঙ্গে দিনমজুরের কাজ শুরু করেছিলাম। সারা দিন কাজ করার পর মজুরি পেতাম মাত্র ৭০ টাকা। অবশ্য তখন একজন মিস্ত্রির মাইনে ছিলো ২২০ টাকা। চার বছরের মধ্যেই মিস্ত্রি হয়ে যাই। এলাকায় একজন রাজমিস্ত্রির সারা দিনে সাড়ে চারশো টাকা বেতন পাই। পাঁচ বছর আগে কেরলে গিয়েছিলাম। সারা দিন কাজ করার পর ৯০০ টাকা বেতন।
এ বার ইদের সময় বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস রোধ করতে দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হয়। ট্রেনের টিকিট বাতিল করতে হয়। কেরলে থাকা বা খাওয়ার কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু কাজ না থাকার কারণে বসে বসে খাওয়া ও ঘরভাড়ার টাকার ব্যবস্থা করতে সমস্যা হতে শুরু করে। সেই সময় আমারা সলকে মিলে বাড়ি ফেরা পরিকল্পনা করি। কিন্তু বাস ভাড়া করে কুড়ি জন বাড়ি আসতে অনেক খরচ হবে। তাই আরও কয়েকজনকে ব্যবস্থা করে ছয় হাজার টাকা করে ভাড়া দিয়ে ইদের তিন দিন পরে বাড়ি ফিরতে পেরেছি।
টানা পাঁচ দিন ধরে বাসে এই প্রথম চেপেছি। বাসে আসতে যেমন কষ্ট হয়েছে ঠিক। একই ভাবে খাবারের কষ্ট হয়েছে খুব বেশি। চানাচুর, বিস্কুট, পাউরুটি, কলা কিনেছিলাম। ওই খাবার না কিনলে ওই পাঁচ দিন না খেয়েই মরতে হত। রাস্তার মধ্যে কোন হোটেল ছিল না। আবার কোন রাজ্য থেকেও খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। ঝাড়খণ্ডে এসে যখন পৌঁছেছিলাম সেটা তখন প্রায় মাঝরাত। আমাদের বাস থামিয়ে আমাদেরকে খিচুড়ি খেতে দিয়েছিলো। সেই সময় মনে হয়েছে কত বছর পরে পেট ভরে খেতে পেলাম। সারা রাত ধরে ভিন রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা যাঁরা করেছে তাঁরা ভাল থাক এই প্রার্থনা করি।
কিন্তু আমাদের রাজ্যে যখন পৌঁছলাম তখন আমাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে প্রায় চার ঘন্টা সময় লাগিয়ে দিল। খাবার না দিয়ে উল্টে জানিয়ে দেওয়া হয় বাড়ি না গেলে হাসপাতালে ভর্তি করে দেব। কী জানি হাসপাতালটা মনে হয় জেলখানার থেকেও বেশি ভয়ের ছিল। কথা না বাড়িয়ে বাসে চেপে বাড়ি ফিরে আসি। এখানে দেড় মাস ধরে বসে আছি কিন্তু কাজ তেমন নেই। আমি দ্রুত কেরালাতে ফিরতে চাই।