Schools of Bengal

ছাত্রশূন্য স্কুল দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাতেই! গত শিক্ষাবর্ষের রিপোর্টে প্রকাশ করে জানাল কেন্দ্র

গত শিক্ষাবর্ষে দেশের কোন প্রান্তে কত স্কুল ছাত্রশূন্য কেটেছে, সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করল কেন্দ্র। এমন স্কুলের সংখ্যা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাতেই। তার পরেই রয়েছে রাজস্থান এবং তেলঙ্গানা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৪৭
Share:

রাজ্যের এক প্রাথমিক স্কুলের সামনে খুদে পড়ুয়ারা। —ফাইল চিত্র।

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্কুলগুলিতে পড়ুয়া ভর্তির হার কেমন, তা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের হিসাবে ওই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে গত শিক্ষাবর্ষে তিন হাজারেরও বেশি (৩২৫৪টি) স্কুল রয়েছে যেখানে কোনও পড়ুয়াই ভর্তি হয়নি। সম্পূর্ণ ছাত্রশূন্য। এমন স্কুলের সংখ্যা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাতেই। অথচ কোনও পড়ুয়া না থাকা এই স্কুলগুলিতে ১৪ হাজার ৬২৭ জন শিক্ষক ছিলেন। আবার এমন অনেক স্কুলও রয়েছে যেখানে পড়ুয়া ভর্তি হলেও শিক্ষক রয়েছেন মাত্র এক জন। কেন্দ্রের রিপোর্টে গত শিক্ষাবর্ষে রাজ্যে এক জন শিক্ষক থাকা স্কুল রয়েছে ৬ হাজার ৩৬৬টি।

Advertisement

২০০ পাতার ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গোটা দেশের নিরিখে প্রায় ১৩ হাজার (১২৯৫৪টি) স্কুলে কোনও পড়ুয়া ভর্তি হয়নি গত শিক্ষাবর্ষে। সেই স্কুলগুলিতে শিক্ষক ছিলেন ৩১ হাজার ৯৮১ জন। আবার প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার স্কুলে পড়ুয়া ভর্তি হলেও সেখানে মাত্র এক জন করে শিক্ষক নিযুক্ত থেকেছেন। কোনও পড়ুয়া ভর্তি না হওয়া স্কুলের সংখ্যার নিরিখে বাংলার পরেই রয়েছে রাজস্থান। সেখানে ২১৬৭টি স্কুলে কোনও পড়ুয়া ভর্তি হয়নি। তালিকায় তৃতীয় তেলঙ্গানা। দক্ষিণের এই রাজ্যে ২০৯৭টি স্কুলে গত শিক্ষাবর্ষে কোনও পড়ুয়া ভর্তি হয়নি।

কোন রাজ্যে কেমন পরিস্থিতি সে বিষয়ে প্রতি বছরই একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে কেন্দ্র। শিক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস’ থেকে এই রিপোর্টটি দেওয়া হয়। বস্তুত, রাজ্যগুলি থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এই রিপোর্ট তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রক। রাজ্যের কোন স্কুলে কী পরিস্থিতি সে বিষয়ে রাজ্য সরকারের তরফেই একটি অনলাইন ব্যবস্থায় তথ্য আপলোড করা হয়। সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকেই তা করতে হয়। সেখান থেকে পাওয়া তথ্য এবং পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এই রিপোর্টটি প্রকাশ করে কেন্দ্র।

Advertisement

কেন্দ্রের এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর শিক্ষক সংগঠনগুলি থেকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের বক্তব্য, “এই পরিসংখ্যান থেকে যেটা পরিষ্কার হচ্ছে যে শুধুমাত্র ভাতা পাইয়ে দিয়ে বা ব্যাগ, খাতা, ট্যাব পাইয়ে দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা যায় না। তার জন্য চাই বুনিয়াদি কাঠামোর উন্নয়ন, যেটা এই সরকার গত ১৩ বছরে অবহেলা করেছে।” তাঁর প্রস্তাব, সরকার সঠিক শিক্ষানীতি গ্রহণ করুক। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীও বলেন, “রিপোর্ট অনুসারে সারা দেশের নিরিখে এ রাজ্যে সবচেয়ে বেশি ছাত্রশূন্য স্কুল। বহু স্কুলে এক জন করে শিক্ষক। এটি আমাদের লজ্জা।” যদিও পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক তৃণমূল শিক্ষক সমিতির রাজ্য সহ-সম্পাদক সঞ্জয় বড়ুয়া জানাচ্ছেন, “এই রিপোর্ট আমরা সম্পূর্ণ রূপে অস্বীকার না করলেও, আমরা খালি চোখে এই ধরনের কোনও পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি না।”

বস্তুত, রাজ্যের কোন স্কুলে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের কী পরিস্থিতি, তা সব স্কুলের থেকে জানতে চেয়েছে শিক্ষা দফতর। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কোন স্কুলে কত জন পড়ুয়া রয়েছে, কোথায় কত জন শিক্ষক রয়েছেন, শিক্ষাকর্মীর সংখ্যাই বা কত, কোন স্কুলে কত শূন্যপদ রয়েছে, সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে রাজ্য। বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, সাধারণত কোনও স্কুলে প্রতি ৪০ জন পড়ুয়াপিছু এক জন শিক্ষক থাকলে, সেটি আদর্শ ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ধরা হয়। তবে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ১১০-১২০ জন পড়ুয়াপিছু এক জন শিক্ষক থাকলেও সেটিকে আদর্শ অনুপাত হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement