ফাইল চিত্র।
বারো বছর ধরে মুম্বই যাতায়াত করছি। কোভিড-১৯ রোধ করতে লকডাউনের জেরে বেমালুম পাল্টে দিয়েছে আমার ফেলে আসা বারো বছরের ধারণা। টানা দু’দিন বাসে আসার পর মাঝরাতে ছত্তীসগঢ়ে খাবার পেয়েছিলাম, তাও আধ সিদ্ধ খিচুড়ি।
আমরা দুই ভাই। আমাদের দেড় বিঘা জমি আছে, তাও আবার ভাগ চাষির দখলে। ফলে ওই জমিতে সারা বছরের ভাতের চাল তো দূর অস্ত, দুই মাস যায় না। তাই বারো বছর আগে মুম্বই শহরে কাজের খোঁজে গিয়েছিলাম। প্রথমে কিছু দিন দিনমজুরের কাজ করার পর মুম্বই শহরের বান্দ্রা এলাকায় একটি হোটেলে কাজ করতে শুরু করি। খাওয়া-থাকা বাদ দিয়ে প্রথমে চার হাজার টাকা বেতন পেতাম। এখন আমি ওই হোটেলের ম্যানেজারের কাজ করি। মাসে বারো হাজার টাকা বেতন পাই। তার বাইরে থাকা ও খাওয়াও পাই।
লকডাউনের সময় মুম্বইয়ে মাঝেমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে খাবার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই খাবার খাওয়া যায় না। নিজেরা বাজার করে রান্না করে খেতাম। তাতে মাস দু’য়েক লকডাউনে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। প্রতি মাসে নয় হাজার টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। কিন্তু এবার ইদের বাজার করে বাড়ি ফেরার জন্য বাড়িতে পাঁচ হাজার করে টাকা পাঠিয়ে ছিলাম। তাই নিজের কাছে কিছু টাকা ছিল। ওই টাকা থেকেই লকডাউনের দুই মাস খাবারের ব্যবস্থা করেছি। আবার আমাদের হোটেল মালিকও চার হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ভাবে বসে থেকে কত দিন চলবে। পরিবারের লোকজন আমার উপর নির্ভর করে থাকে। মা, বাবা, স্ত্রী ও এক ছেলে নিয়ে আমার সংসার। আমার আয়ের উপর নির্ভর করে। বাড়িতে ফিরে যদি কিছু কাজ পাওয়া যায়, তার থেকেও বড় বিষয় হচ্ছে সকলে মিলে এক সঙ্গে থাকলে খরচ কিছুটা কম হবে। ওই ভেবেই সাড়ে ছয় হাজার টাকা দিয়ে বাসের টিকিট কেটে বাড়িতে ফিরেছি। আসার সময় বিস্কুট, চানাচুর, মুড়ি কিনে নিয়েছিলাম। দু’দিন পর ছত্তীসগঢ়ে যখন পৌঁছই তখন মাঝরাত। সেই সময় খিদেও পেয়েছিল। আমাদের খিচুড়ি দেওয়া হয়। কিন্তু সেটা ছিল আধসিদ্ধ, প্রায় না খেয়েই উঠে যেতে হয়েছিল। তারপর ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডে জলের বোতল, কলা, পাঁউরুটি দিয়েছিল। দেয়নি শুধু আমার রাজ্যে।
আমাদের রাজ্যে ঢুকতেও দেয়নি। আসানসোলে জানিয়ে দেওয়া হয়, মুম্বই থেকে কোনও শ্রমিকের গাড়ি রাজ্যে ঢোকা যাবে না। আমাদের বাস ঘুরিয়ে ফের বাঁকুড়া হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। আমাদের কাজ এখানে নেই, মুম্বইয়ে কাজ শুরু হলেই আমি ফিরে যাবো মুম্বইয়ে।