অঙ্ক করাচ্ছেন বিশাখা মাসি। নিজস্ব চিত্র।
মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার নয়নসুখ শ্রীমন্তপাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত দেড় দশক তিনি মিড ডে মিল রান্নার কাজে বহাল। সেই বিশাখা মাসি যে অঙ্কেও জবরদস্ত, অঙ্ক স্যর না থাকলে কে জানাত? ক্লাসের অঙ্কে কাঁচা কচিগুলোকে আঁক কষাতে যখন মাস্টারমশাইয়ের ভিরমি খাওয়ার দশা, তখন মুশকিল আসান হয়ে ক্লাসে আবির্ভাব মাসির। জলের মতো অঙ্ক শিখিয়ে বাচ্চাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তিনি দেখেন ভিডিয়ো করছেন খোদ অঙ্ক স্যর! রান্নার মাসির অঙ্ক শেখানোর কায়দা দেখে মুগ্ধ সবাই।
সোজা অঙ্ক কষতে ভুল করছে পড়ুয়ারা। এক বার নয়, বার বার। মাস্টারমশাই ক্লাসে রয়েছেন, কিন্ত তা-ও নিজেকে সে দিন আর আটকাতে পারেননি বিশাখা। শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে ক্লাসে ঢুকে সেই সব না পারা অঙ্ক কষতে শুরু করেন তিনি। প্রতিটি অঙ্ক ধরে ধরে জলের মতো সহজ-সরল করে বুঝিয়েও দেন পড়ুয়াদের। তাজ্জব শিক্ষকই মাসির ব্ল্যাকবোর্ডে অঙ্ক শেখানো ফোনবন্দি করে নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। বেশ কিছু ক্ষণ পর মাসি বুঝতে পারেন, মাস্টারমশাই এ সব ক্যামেরাবন্দি করছেন। তখন চূড়ান্ত অপ্রস্তুত মুখে মাস্টারমশাইকে অনুরোধ করেন, ‘‘এ সব যেন আবার নেটে ছেড়ে দেবেন না, স্যর।’’ কিন্তু কে শোনে কার কথা! সেই ভিডিয়ো এখন ভাইরাল। প্রৌঢ়ার এ ভাবে অবলীলায় অঙ্ক শেখানোর ছবি রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে।
নিজস্ব চিত্র।
ভাইরাল হওয়া ‘শিক্ষিকা’র নাম বিশাখা পাল। যদিও বিশাখা মাসি নামেই তাঁর পরিচিতি। কী ভাবে শিখলেন এত ভাল অঙ্ক? জানা গিয়েছে, প্রৌঢ়ার পড়াশোনার ইচ্ছা বরাবরের। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েওছেন। কিন্ত বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না, তাই মাঝপথেই পড়া ছাড়তে হয়। এখন ওই স্কুলে মিড ডে মিল রান্নার কাজ করেন। কঠিন কঠিন অঙ্ক কষা ছাড়াও একটা পছন্দ আছে মাসির। তা হল রবীন্দ্রনাথের গান আর কবিতা। প্রিয় শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। রান্না করা আর অঙ্ক কষার মাঝে তাই মাঝেমাঝেই গুনগুনিয়ে ওঠেন মাসি।