শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল স্কুলে বাহিনীর লাঠিচার্জ। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
অনেকেরই প্রত্যাশা ছিল, গত পঞ্চায়েত ভোটের ভূত পুরভোটে আর ফিরবে না। ততটা না হলেও এ বারও লাগাতার রিগিং, বুথ জ্যাম, হুমকি, মারধরের অভিযোগ উঠল রাজ্যের শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
রবিবার নদিয়ার ১১টি পুরসভার মধ্যে ১০টিতেই ভোট হয়। যে সব জায়গায় ‘অবাধ’ ভোট হয়েছে বলে প্রশাসনের দাবি, তারও বেশির ভাগেই একতরফা ছাপ্পাভোটের অভিযোগ উঠেছে বিরোধীদের তরফে। শান্তিপুর ও তাহেরপুরে সিপিএমকে এবং কৃষ্ণনগরের কিছু বুথে কংগ্রেস মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেও বিজেপিকে সে ভাবে ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তুলতে দেখা যায়নি। দু’একটি ক্ষেত্র বাদে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ব্যতিক্রম একমাত্র নবদ্বীপ।
বিরোধীদের অভিযোগ, বেশ কিছু জায়গায় পুলিশেরই সহযোগিতায় বুথ জ্যাম করে ছাপ্পা দিয়েছে তৃণমূলের লোকজন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সশস্ত্র পুলিশকর্মী ও অফিসারেরা সকাল থেকেই ছিলেন নীরব দর্শকের ভূমিকায়। বুথের গেটের মুখে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বহিরাগতদের জটলা দেখা গেলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ তাদের সরানোর চেষ্টা করেনি বলে অভিযোগ। বিরোধী দলের এজেন্টদের হুমকি, বুথ থেকে বার করে দেওয়া, প্রার্থীকে মারধর করা হয়েছে অবলীলায়। ফলে তৃণমূল-পুলিশ আঁতাঁতের অভিযোগ উঠছে।
তবে বেলার দিকে জেলা পুলিশের কর্তারা বাহিনী নিয়ে মাঠে নামার পরে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়। বিশেষ করে শান্তিপুরে বহিরাগতদের হাতে পুলিশ নিগৃহীত হওয়ার পরে বাহিনী সক্রিয় হয়ে ওঠে। কৃষ্ণনগরেও কোথাও কোথাও তাদের বুথের সামনে লাঠি চালিয়ে ভিড় হটাতে দেখা গিয়েছে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র মতে, “কল্যাণীতে পুলিশ শাসক দলের এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছে। রানাঘাটে তারা কিছু জায়গায় সক্রিয় ছিল। আর কৃষ্ণনগরে পুলিশের মিশ্র ভুমিকা দেখেছি।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসীম সাহার মতেও, “পুলিশ মিশ্র ভূমিকা পালন করেছে।” রানাঘাটের বিজেপির বিধায়ক তথা দলের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “পুলিশ রিগিং আটকানোর ন্যূনতম চেষ্টা করেনি। পুলিশের সঙ্গে সেটিং করেই তৃণমূল ছাপ্পা দিয়েছে।” যদিও তৃণমূলের উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জয়ন্ত সাহার দাবি, “পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত ভাল ছিল। ভোট আবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে।”
কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার ঈশানী পালের দাবি, “আমাদের কর্মীরা সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোট করিয়েছেন।” আর রানাঘাট পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার (সদর) শৌভনিক মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “কোনও অশান্তির খবর পেলেই পুলিশ তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিয়েছে।”