শব্দবাজির দাপট কমলেও সময়ের পরীক্ষায় ফেল করল পুলিশ।
শব্দ এবং আতসবাজি পোড়ানোর জন্য দেশের শীর্ষ আদালত সময় বেঁধে দিয়েছিল দু’ঘণ্টা। কিন্ত মঙ্গলবার বহরমপুর শব্দময় হয়ে উঠল আঁধার নামার আগেই। জেলার আনাচ কানাচ থেকেও দুর্মর শব্দের নালিশ আসতে শুরু করেছিল সন্ধ্যার পর থেকেই। যে ভরসা সপ্তাহভর জুগিয়ে গিয়েছিল জেলা পুলিশ, তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই শুনতে হল— এক রাত্তিরের তো ব্যাপার, একটু মানিয়ে নিননা!’’ তাই প্রচ্ছন্ন একটা প্রশ্নও উঠে গেল, বাজি ফাটাতে প্রশ্রয়টা দিল কে? মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশকুমারকে দিনভর চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। জবাব দেননি এসএমএসেরও।
তবে গ্রাম-শহরের সাধার মানুষের অভিজ্ঞতা সে কথা বলছে না। বহরমপুর থেকে জঙ্গিপুর, কান্দি থেকে বেলডাঙা— স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বাজি পোড়ানো শুরু হয় ভর বিকেলেই। রাত আট’টা পর্যন্ত সবুর করার ধৈর্য্য কেউ দেখাননি এবং যা চলেছে রাতভ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর নিষিদ্ধ শব্দবাজি পোড়ানো হচ্ছে বলে বহরমপুর থানায় একের পর এক ফোন আসে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার কোনও সুরাহা হয়নি। খাগড়ার কল্পনা মোড় কিংবা নিমতলা এলাকা থেকে ফোন পাওয়ার পরেই ওই এলাকায় গিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। এমনই দাবি জেলা পুলিশের কর্তাদের। তবে নালিশ এসেছে এমনও— ‘‘পুলিশকে ফোন করলে পাল্টা উত্তর পেয়েছি, এক রাত্রির তো ব্যাপার মানিয়ে নিন।’’ স্থানীয় থানার এক কর্তা বলছেন, ‘‘বেশ কিছু জাযগায় অভিযোগ পেয়েই ছুটে গিয়েছি আমরা। কিন্তু গিয়ে দেখি এলাকা সুনসান।’’
কালী পুজোর আগে থেকেই শব্দবাজি এবং জুয়া খেলা নিয়ে চিন্তায় ছিল পুলিশ-প্রশাসন। তার উপরে আতসবাজি পোড়ানোর ক্ষেত্রে দেশের সর্বোচ্চ আদালত মাত্র দু’ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়ায় কপালে ভাঁজ পড়েছিল পুলিশ প্রশাসনের। আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার বাইরে বাজি পোড়ানো কতটা আটকাতে পারবে তা নিয়ে সংশয়ও ছিল পুলিশ কর্তাদের মধ্যেই। সেই সংশয়ই শেষ পর্যন্ত জিতে গেল বলে মনে করছেন জেলা তৃণমুলের নেতারাও।
পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, বহরমপুর শহরে মঙ্গলবার রাতভর পুলিশের পাঁচটি গাড়ি টহল দিয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পরে এলাকায় সঙ্গে সঙ্গেই গিয়েছে পুলিশ। তবে, খাগড়া নিমতলা, কাশিমবাজার, চুয়াপুর এলাকায় সন্ধেভর দাপট দেখিয়েছে শব্দবাজি। খাগড়ার এক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘পুলিশ কোথায়! বাজির শব্দে অতিষ্ট হয়ে এক সময় পাড়ার লোক এক জোট হয়ে রাস্তায় নেমে তা বন্ধ করেন।’’ শব্দ দাপটে সারা রাত ছটফট করেছে রাস্তার কুকুরেরাও। কখনও সিঁড়ি তলায় কখনও নর্দমায় লুকিয়ে বাঁচতে চেয়েছে তারা, এমনও দেখা গিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ বহরমপুর জোনের সভানেত্রী শিল্পী সেন বলেন, ‘‘দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশে আশার আলো দেখেছিলাম। শব্দবাজি যেমন ফেটেছে সময় মেনে বাজি পোড়ানোর নির্দেশ মানা হল না। ফলে পরিবেশ সেই দূষিত হল।’’