ফাইল চিত্র।
কল্যাণী কার্নিভালের ডিউটিতে আসতে দেরি করায় নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের এক প্রবীণ চিকিৎসককে ‘শো-কজ়’ করলেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) ।
কোভিড হাসপাতালের ডিউটিতে গাফিলতি করলে চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে যে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে, দিন তিনেক আগেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন তথা স্বাস্থ্য দফতর। তা যে নেহাত ফাঁকা বুলি নয়, তারই নমুনা মিলল।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২ থেকে ৪ অক্টোবর কার্নিভাল কোভিড হাসপাতালে ডিউটি দেওয়া হয়েছিল নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রবীণ চিকিৎসক তপনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এর আগেও পাঁচ বার তিনি ওই হাসপাতালে ডিউটি করেছেন। কিন্তু ২ অক্টোবর, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ডিউটি থাকলেও তিনি আসেন বিকেল ৪টে নাগাদ। ওই রাতেই তাঁকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেন সিএমওএইচ অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার রাত পর্যন্ত তিনি ওই চিঠি হাতে পাননি জানিয়ে তপনবাবু বলেন, “সিএমওএইচ আমায় ফোন করে শো-কজ়ের কথা জানিয়েছেন। চিঠি হাতে পেলেই আমি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তর দিয়ে দেব।”
ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার রাতেই জেলা সদর ও কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করে জেলাশাসক বিভু গোয়েল জানান, গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনে ‘শো-কজ়’ করা হবে। উত্তর সন্তোষজনক না হলে সাসপেন্ডও করা হতে পারে। এমনকি রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সুপারিশ করার কথাও চিন্তাভাবনার মধ্যে রয়েছে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। বৃহস্পতি ও শুক্রবার পরপর দু’টি নির্দেশিকাও জারি করেন সিএমওএইচ।
তপনবাবু অবশ্য তাঁর ডিউটিতে পৌঁছতে দেরির জন্য কার্যত স্বাস্থ্য দফতরকেই উল্টে দায়ী করেছন। তাঁর বক্তব্য, “নির্দেশিকা অনুযায়ী কোভিড হাসপাতালে ডিউটি করতে যাওয়ার জন্য দফতর থেকে গাড়ি দেওয়ার কথা। কিন্তু কোনও বারই আমায় তা দেওয়া হয়নি। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে যাতায়াত করেছি।” তাঁর দাবি, “এ বারও গাড়ির বন্দোবস্ত করেছিলাম। কিন্তু সকালে সেই চালক জানায়, তার জ্বর আর পেট খারাপ হওয়ায় যেতে পারবে না। নতুন করে চালকের বন্দোবস্ত করতে দেরি হয়ে যায়।” সিএমওএইচ পাল্টা বলেন, “যে সমস্ত চিকিৎসক ও নার্স কোভিড হাসপাতালে ডিউটি করতে যাচ্ছেন, সকলেই সরকারি গাড়ি পাচ্ছেন আর উনি পাচ্ছেন না এটা বোধহয় ঠিক নয়। উনি সম্ভবত নিজের ইচ্ছা মতো যাতায়াত করবেন বলেই সরকারি গাড়ি নেননি।” তবে কোভিড ডিউটি করতে তিনি যে অনিচ্ছুক, তা-ও তপনবাবু জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, “আমার বয়স প্রায় ষাট বছর। সুগার, কিডনির সমস্যা আছে। একাধিক বার চিঠি দিয়ে কোভিড হাসপাতাল থেকে অব্যাহতি চেয়েছি। লাভ হয়নি।” তাঁর দাবি, “নবদ্বীপ হাসপাতালেই দু’জন অল্পবয়স্ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে কিন্তু কোভিড হাসপাতালে ডিউটি দেওয়া হচ্ছে না!” সিএমওএইচ বলেন, “বহু চিকিৎসকেরই নানা শারীরিক সমস্যা আছে। সমস্ত দিক বিবেচনা করেই আমরা ডিউটি দিই। ওঁর শো-কজ়ের উত্তর পাওয়ার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”