আটায় মেলে টাকা/ ১
Ration

রেশনের মাল বিক্রি করেই মুনাফা

খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, ফুড কর্পোরেশনের (এফসিআই) গম দেয় আটাকল মালিককে। তা ভাঙিয়ে তৈরি আটা প্রথমে ডিস্ট্রিবিউটর ও পরে ডিলারের মাধ্যমে গ্রাহকেরা সংগ্রহ করেন।

Advertisement

সন্দীপ পাল

নদিয়া শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪ ০৭:৩৫
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

রেশনের আটা গ্রাহকদের না দিয়ে আটাকলে তা বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে নদিয়া জেলার একাধিক ডিস্ট্রিবিউটরের বিরুদ্ধে। প্রামাণ্য নথি-সহ জেলাশাসকের কাছে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এমনকি এম আর ডিলার আসোসিয়েশনের নদিয়া জেলার সম্পাদকেরও নাম জড়িয়েছে এই কেলেঙ্কারিতে।

Advertisement

খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, ফুড কর্পোরেশনের (এফসিআই) গম দেয় আটাকল মালিককে। তা ভাঙিয়ে তৈরি আটা প্রথমে ডিস্ট্রিবিউটর ও পরে ডিলারের মাধ্যমে গ্রাহকেরা সংগ্রহ করেন। কিন্তু অভিযোগ, কিছু ডিস্ট্রিবিউটর বরাদ্দ আটার একটা বড় অংশ কল থেকে নিজেদের গুদামে না এনে ওই কলেই বিক্রি করছেন। তার প্রমাণ হিসেবে অভিযোগকারীরা শান্তিপুরের একটি আটাকলের হিসাবের খাতার পাতা তাঁদের লিখিত অভিযোগের সঙ্গে জমা দিয়েছেন।

অভিযোগকারীদের অন্যতম, নাকাশিপাড়ার বাসিন্দা বসিরউদ্দিন শেখ মণ্ডলের দাবি, “এই দুর্নীতির মূল পান্ডা শান্তিপুরের জি কে অ্যাগ্রো আটাকলের মালিক সুব্রত ঘোষ। তিনি এফসিআই থেকে পাওয়া পুরো গম থেকে আটা তৈরি করেন না। গমের একাংশ খোলা বাজারে বিক্রি করেন। আর সব গম পেশাই হয়েছে দেখিয়ে খাদ্য দফতর থেকে বরাদ্দ টাকা তুলে নেন। তার পরে তিনি যে দামে গম খোলা বাজারে বিক্রি করেন, তার চেয়ে কম দামে ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে আটা বিক্রি করেন। ডিস্ট্রিবিউটরেরা আসলে আটা নেন না। তার পরিবর্তে টাকা নেন।”

Advertisement

জেলাশাসকের কাছে জমা পড়া অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, এই ভাবে সুব্রত ঘোষ বিপুল টাকার দুর্নীতি করেছেন। আসলে গ্রাহকদের দেওয়ার জন্য যে পরিমাণ আটা দরকার তা তিনি উৎপাদনই করেন না। খাতায়-কলমে আটার নামে টাকার লেনদেন হচ্ছে। যদিও সুব্রতের দাবি, “কোনও দুর্নীতি করা হয় না। দফতর যে গম দেয় তার আটা বুঝে নেয়। আমার সব বিষয় দফতর জানে।”

বসিরুদ্দিনের আরও অভিযোগ, নাকাশিপাড়া ব্লকের ডিস্ট্রিবিউটর অজয় চট্টোপাধ্যায় বরাদ্দ আটার প্রায় অর্ধেক বিক্রি করেছেন আটাকলে। অনেক দিন ধরেই তিনি আটাকলকে লাখ লাখ টাকার আটা বিক্রি করে আসছেন। নদিয়ার সবচেয়ে বড় ডিস্ট্রিবিউটর এই অজয় চট্টোপাধ্যায়ই। বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ লেজারে সই করে তিনি টাকা নিয়েছেন দাবি করে তার ‘প্রমাণ’ও পেশ করেছেন বসিরুদ্দিন।

এ প্রসঙ্গে খাদ্য দফতরের এক কর্তা জানান, ডিলার তাঁর বরাদ্দের পুরো আটা না নিলে তবেই ডিস্ট্রিবিউটর মিল থেকে আটার বদলে টাকা নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে অনেক ডিলার অজয়ের থেকে পুরো আটা নেননি। তাঁরা আটার বদলে টাকা নিয়েছেন। ডিস্ট্রিবিউটরেরা কেজি প্রতি প্রায় ২৫ টাকা দরে আটা বিক্রি করেছেন আটাকলকে। কোনও ডিলার বরাদ্দের যতটা নেননি তার জন্য ডিস্ট্রিবিউটর কেজি প্রতি ২২ টাকা করে দাম দিয়েছেন। তবে এই বিক্রির দর প্রতি মাসে সমান হয় না। অজয় দাবি করেন, “সরকার আমায় আটা দেয় না।” যদিও খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে তিনি আটা পান।

এই অভিযোগ শুধু অজয়ের চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেই উঠেছে, তা নয়। অভিযোগকারী সুকুমার সাহার দাবি, শান্তিপুরের বিএমবি সমিতির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ বকলমে শুভজিৎ কুণ্ডু চালান। তিনিও বরাদ্দ আটার একাংশ না দিয়ে টাকা নিয়েছেন। খাদ্য দফতরের সঙ্গে চুক্তি ভিত্তিতে ব্যবসা করেন এমন এক জনের দাবি, বিএমবি সমিতির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ ছাড়াও শুভজিতের পরিবারের রেশনের ডিলারশিপ আছে। শুভজিৎ যে ক্যাশ লেজারে সই করে আটার বিনিময়ে টাকা নিয়েছেন সেই ‘প্রমাণ’ দিয়েই অভিযোগ করা হয়েছে। এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানতে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।

খাদ্য দফতরের ভূমিকা নিয়েও অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, ডিস্ট্রিবিউটর কতখানি আটা পেলেন তা দফতরের ইনস্পেক্টর খতিয়ে দেখবেন। বরাদ্দ আটার পুরোটা যদি অজয় চট্টোপাধ্যায় নিজের গুদামে না এনে থাকেন, ইনস্পেক্টর তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেননি কেন? নদিয়া জেলা খাদ্য নিয়ামক অভিজিৎ ধাড়া বলেন, ”আমরা এ ব্যাপারে কোনও অভিযোগ পাইনি। তা পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।” (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement