—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সেটা ছিল ২০২২ সালের অক্টোবর। রাজ্যের সরকারি এবং সরকারপোষিত স্কুলের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের বরাদ্দ শেষ বারের মত বেড়েছিল। তার দু’বছরের মাথায় আবার বরাদ্দ বৃদ্ধি হয়েছে মিড-ডে মিলের। যদিও মধ্যবর্তী সময়ে মূল্যবৃদ্ধির হারের তুলনায় সেই বৃদ্ধি যে নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর তা নিয়ে নদিয়ার শিক্ষকমহলে কোনও দ্বিমত নেই।
গত ২৭ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রকের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে অনুসারে প্রাথমিকে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বৃদ্ধি হয়েছে ৭৪ পয়সা এবং উচ্চ প্রাথমিকে এক টাকা ১২ পয়সা মাত্র। ফলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের মাথা পিছু মিড-ডে মিলের বরাদ্দ দাঁড়াল ৬ টাকা ১৯ পয়সা। অন্য দিকে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের মাথা পিছু বরাদ্দ দাঁড়াল ৯ টাকা ২৯ পয়সা।
এর আগে, গত মার্চে কেন্দ্রীয় বাজেটের সময় শিক্ষামহলের তরফে প্রবল ভাবে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি তোলা হয়েছিল। সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বাজেটে মিড-ডে মিল সম্পর্কে আলাদা করে কোনও উল্লেখ করা হয়নি। অগ্নিমূল্য বাজারদরে সপ্তাহে ছ’দিন পড়ুয়াদের পাতে সুষম খাবার দিতে নাজেহাল শিক্ষকেরা সমালোচনা করেছিলেন, পড়ুয়াদের দুপুরের খাবারের বরাদ্দ বৃদ্ধি না করা আসলে শিশুদের প্রতি এক ধরনের অবিচার। ২০২২ সালের বরাদ্দ অনুযায়ী এত দিন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বরাদ্দ ছিল ৫.৪৫ টাকা এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৮.১৭ টাকা।
শিক্ষাবর্ষের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে হঠাৎ এই যৎসামান্য বৃদ্ধি ঘিরে ক্ষোভ চেপে রাখেননি বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তাঁদের মতে, লাফিয়ে বেড়ে চলা খাদ্যসামগ্রী, আনাজ, জ্বালানির দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওই সামান্য টাকায় সরকার প্রদত্ত সাপ্তাহিক নির্ঘন্ট মেনে নির্দিষ্ট পরিমাণ সয়াবিন, ডিম, মাংস, ডাল, তরকারি পড়ুয়াদের মুখে তুলে দেওয়া ক্রমশ অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই খাদ্যের পরিমাণ ও পুষ্টিগুণের সঙ্গে আপস করা ছাড়া কোনও উপায় থাকছে না শিক্ষকদের। অথচ গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলিতে এখন পড়ুয়ারা আসে প্রধানত মিড-ডে মিলের জন্যই।
নদিয়ার ভীমপুর স্বামীজি বিদ্যাপীঠে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ন’শো। প্রধান শিক্ষক সন্দীপ দে বলেন, “যে টাকা দেওয়া হচ্ছে তাতে মিড-ডে মিল চালাতে আমাদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। এই শীতেও বাজারে কোনও আনাজ ৪০-৫০ টাকার কমে মিলছে না। একটা ডিম ৭ টাকা। মিড-ডে মিলে পড়ুয়াদের সত্যি করে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া সম্ভব নয়। বরাদ্দ আরও বাড়ানো দরকার।” একই কথা করিমপুর থেকে কল্যাণী— শহর, আধা শহর, গ্রাম সব জায়গার বিদ্যালয় প্রধানদের।
রাজ্যের স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিল প্রকল্পে রান্না করা খাবার দেওয়া শুরু হয় ২০০৩ সাল থেকে। বলা হয়েছিল, খাবারের গুণমান হবে ৩০০ ক্যালরি এবং ৮ থেকে ১৩ গ্রাম প্রোটিনযুক্ত। কিন্তু সে হিসাব এখন আর মিলছে কই?
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিলীপ সিংহ বলেন, “বাজারের যা অবস্থা তাতে মিড-ডে মিলে পড়ুয়াদের সত্যি করে সুষম খাবার খাওয়াতে হলে অন্তত ৩-৪ টাকা করে মাথা পিছু বাড়ানো দরকার ছিল।” এবিটিএ-র নদিয়া জেলা সম্পাদক সৌমেন পাল বলেন, “আলু বা অন্য যে কোনও আনাজ যখন কমপক্ষে ৪০ টাকা কেজি, তখন ৭৪ পয়সা বরাদ্দ বৃদ্ধি নিষ্ঠুর পরিহাস। আজকের দিনে পঞ্চম পর্যন্ত অন্তত ১৫ টাকা এবং অষ্টম পর্যন্ত ২০ টাকা মাথা পিছু বরাদ্দ হওয়া উচিত।” বিজেপির শিক্ষক সংগঠনের নদিয়া জেলা আহ্বায়ক অমিত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এই বৃদ্ধি যথেষ্ট নয় মেনে নিয়েও বলছেন, “সবটা কেন্দ্রকেই করতে হবে কেন? রাজ্যও তো তার অংশের বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে পারে। যেমনটা তামিলনাড়ু বা কর্ণাটক করেছে। কেন্দ্রকে তো গোটা দেশের কথাই ভাবতে হয়।”