প্রতীকী ছবি।
কিছু দিন আগেই জন্ম হয়েছে এক শিশুকন্যার। কিন্তু সেই সদ্যোজাত আরও কোনও দিন তার বাবাকে কাছে পাবে না। কারণ, দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ হারাতে হয়েছে তার বাবাকে। শান্তিপুর পুরসভা এলাকার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের নীচের পাড়া এলাকায় ঘটা এই খুনের ঘটনায় আঙুল উঠছে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের দিকেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে পেশায় রাজমিস্ত্রী গোবিন্দ দাসকে খুব কাছ থেকে গুলি করে মোটরবাইকে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। তাঁকে কল্যাণীর জে এন এম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বুধবার রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তার মাত্র চার দিন আগেই শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন গোবিন্দ দাসের স্ত্রী পাপিয়া দাস। প্রথমে তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি। কিন্তু মা ও শিশু সুস্থ থাকায় বৃহস্পতিবারই তাঁদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আবার ওই দিনই বাড়িতে নিয়ে আসা হয় গোবিন্দের মৃতদেহ। তখনই পরিবারের থেকে মর্মান্তিক সংবাদটা পান পাপিয়া। তারপর থেকে সদ্যোজাত সন্তানকে আঁকড়ে ধরে একটানা কেঁদেই চলেছেন তিনি। গোবিন্দের খুড়তুতো ভাই ভজন দাস বলেন, “এমন ঘটনা যেন কারও সঙ্গে না ঘটে। বৌদির মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে কী ভাবে বাঁচবে বলতে পারেন! শিশুটারও ভাগ্য, কোনও দিন বাবার মুখটা দেখা হবে না তার।”
পুরো ঘটনায় শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা। এই ঘটনার পর শান্তিপুরের বাসিন্দাদের একাংশ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, রাজ্যের শাসক দলের কোন্দল এবং রাজনৈতিক বিবাদ নিয়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,বেশ কয়েক মাস ধরেই বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের অনুগামীদের সঙ্গে শান্তিপুর কলেজের প্রাক্তন জিএস টিএমসিপি নেতা মনোজ সরকারের বিবাদ চরম আকার নিয়েছে। প্রায় দিনই শান্তিপুর পুরসভা এলাকার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের নীচের পাড়া এলাকায় বোমাবাজি এবং হামলার ঘটনা ঘটছে। বছর ছাব্বিশের গোবিন্দের খুনের ঘটনা তারই চরম পরিণতি বলে স্থানীয়দের একাংশের দাবি।
কিছু এলাকাবাসীর বক্তব্য, এর আগে পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের মধ্যে পড়ে খুন হয়েছিলেন সর্বনন্দিপাড়া এলাকার বাসিন্দা সঞ্জীব প্রামাণিক। এই ভোটের ফল প্রকাশের পরে বাড়িতে ঢুকে পরিবারের সকলের সামনে খুন করা হয়েছিল বিজেপি কর্মী বিপ্লব শিকদারকে। আবার মাস কয়েক আগে বড়বাজার ব্রহ্মাতলা এলাকায় খুন হয়েছিলেন শান্তনু মাহাতো ওরফে গনা। সেই ঘটনায় সরাসরি বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। আর এবার খুন হলেন বিধায়কের বিরোধী গোষ্ঠীর অন্যতম নেতা মনোজ সরকারের আত্মীয় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত গোবিন্দ। ঘটনার সময় তাঁর সঙ্গে থাকা চিরঞ্জিৎ বক্সি বলেন,“বিধায়কের লোকজন কোনও ভাবেই এলাকা দখলে আনতে পারছে না। সেই কারণেই ওরা গোবিন্দকে খুন করল।” মনোজ সরকার বলেন, “বিধায়কের লোকজন এ ভাবে একের পর এক খুন করে চলেছে। আমরা চাই শহরে শান্তি ফিরুক।” ফোন করেও পাওয়া যায়নি অরিন্দম ভট্টাচার্যকে।