ডেঙ্গির হুলে মশারির ঢাল, জ্বর নিয়ে জর্জরিত তামাম জেলা

বহরমপুর থেকে নওদা, ডোমকল থেকে কান্দি— সর্বত্রই চাহিদাটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। 

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস ও মফিদুল ইসলাম

বহরমপুর ও নওদা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৯ ০২:০৭
Share:

মশার সঙ্গে আড়ি: উপরে মশারির দোকানে ভিড় নওদায়। ফাইল চিত্র।

মশা মারতে কামানই যথেষ্ট নয়। সঙ্গে দোসর হয়েছে মশারি, মশা মারার ধুপ, মশা-নাশক তেল, ক্রিম, মায় বৈদ্যুতিক ব্যাটও!

Advertisement

ডেঙ্গির ছায়া পড়তেই জেলা জুড়ে এ সবের বিক্রিও বেড়েছে তাল মিলিয়ে, হুহু করে। বহরমপুরের জলট্যাঙ্কের মোড়ে সার দিয়ে চাদর-বালিশ-মশারির দোকান। উঁকি মারতেই দোকানি এগিয়ে আসছেন, ‘‘খাটের মাপ বলুন, সিঙ্গল নেট তো, কী রং নেবেন?’’ পর পর ঝড়ের বেগে প্রশ্ন, ধরেই নিচ্ছেন মশারি কিনতেই পা পড়েছে দোকানে। এক গাল হেস বলছেন, ‘‘মাস খানেক আগেও দিনে তিন-চারটি মশারি বিক্রি ছিল, এখন দিনভর খান চল্লিশ বেচছি!’’ ছবিটা প্রায় একইরকম মশা নিরোধক ক্রিম-ধূপ-কয়েলের দোকানেও।

বহরমপুর থেকে নওদা, ডোমকল থেকে কান্দি— সর্বত্রই চাহিদাটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

Advertisement

এক দিকে মশাবাহিত রোগের ভয়, অন্য দিকে স্বাস্থ্য দফতরের সচেতনতা— জোড়া ফলায় কাজ যে হয়েছে এই সব দোকানে পা রাখলেই মালুম হচ্ছে। পাড়ায় পাড়ায় রিকশায়-অটোয় লাগাতার প্রচার আর পড়শির জ্বর হলেই ভয় থেকে মশারি কেনা এখন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিশ্চিন্তে বিড়ি বাঁধা। ফাইল চিত্র।

মুর্শিদাবাদের মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারীক প্রশান্ত বিশ্বাস বলছেন, ‘‘প্রচারটা যে কাজে দিয়েছে শুনেও ভাল লাগছে। মানুষের সচেতনতা যত বাড়বে ততই নিশ্চিন্ত হব।’’ সঙ্গে যোগ করছেন, কোন এলাকায় তাঁর স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা কেমন করে প্রচার করছেন।

বহরমপুরের জলট্যাঙ্ক মোড়ের মশারি ব্যবসায়ী রতনকুমার হালদার বলছেন, ‘‘প্রচার যত বাড়ছে, বিক্রি বাড়ছে ততই। সাধারনত গরমে মশারির তেমন বিকিকিনি হয় না। কিন্তু ডেঙ্গি সব হিসেব উল্টে দিয়েছে। এখন ভয়ে হোক বা সচেতন হয়েই হোক মশারি কিনছেন।’’ তিনি জানান, দু’বছর আগেও গ্রামের লোক তেমন মশারি কিনতেন না। এখন গাঁ-গঞ্জ থেকেও মানুষজন আসছেন মশারির খোঁজে।

মুর্শিদাবাদের নওদা ব্লকে ডেঙ্গির প্রকোপ সব থেকে বেশি। সাকুল্যে খান দুয়েক মশারির দোকান সেখানে। সে সব দোকানে এখন মাথা গলানোই দুষ্কর। আশপাশের মণিহারি দোকানে পাল্লা দিয়ে বিক্রি হচ্ছে মশা মারার কয়েল, ধুপ, ক্রিম।

মশারি ব্যবসায়ী মহম্মদ রুস্তম বলছেন, ‘‘নওদায় ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিতেই মশারি বিক্রি বেড়ে গিয়েছে। আগের থেকে প্রায় তিনগুন বেশি মশারি বিক্রি হচ্ছে।’’ অন্য এক ব্যবসায়ী মহম্মদ সেলিম আলি যোগ করেন, ‘‘গড়ে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশটি করে মশারি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রি বাড়ায় আমাদের দু’পয়সা লাভ হচ্ছে, জয় ডেঙ্গি!’’

নওদার বুন্দাইনগরের আশিস মন্ডল বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য কর্মীরা মশারি টাঙিয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। ডেঙ্গির মতো ঘাতক রোগ থেকে বাঁচতে এ ছাড়া আর উপায় কী!’’

ছবিটা বদলে গেছে হাসপাতাল চত্বরেও। কর্মী থেকে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর বাড়ির লোক এখন মশারি টাঙিয়ে রাত জাগছেন। আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের এক নার্স বলেই ফেললেন, ‘‘হাসপাতালে কাজ করার সময় তো মশারির ভিতরে থাকার সুযোগ নেই। ভয়ই লাগে জানেন!’’

সেই ভয়ের ছায়ায় এখন মানুষের মন্ত্র জয় বাবা মশারি!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement