প্রতীকী ছবি
বছর পাঁচেক ধরে মুম্বইয়ে রাজমিস্ত্রি এবং দিনমজুরের কাজ করি। বছর দু’বার বাড়ি আসি, বেশ ভালই ছিলাম মুম্বইয়ে। এ বার পুজোর সময় বাড়ি এসে মাসখানেক থাকার পর কালীপুজোর সময় মুম্বইয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলাম। থাকার জন্য ঘর ভাড়া আর খাওয়া খরচ নিজেকেই করতে হতো। তাতে মাসে চার হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু আয় হয় প্রায় কুড়ি হাজার টাকা। মুম্বইয়ে কাজ করতে যাওয়ার পর থেকে মাটির বাড়ি ভেঙে দু’ঘরের পাকা বাড়ি করেছি। যদিও ওই বাড়ির কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। কিন্তু মার্চ মাসের জনতা কার্ফুর মধ্যে দিয়ে দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হয়েছিল কোভিড-১৯ রোধ করার জন্য, সেই সময় থেকেই খুব কষ্ট হয়েছে মুম্বইয়ে।
লকডাউনের সময় থেকে এখনও পর্যন্ত মুম্বইয়ে হু হু করে বেড়েই চলেছে করোনাভাইরাস পজ়িটিভের সংখ্যা। আমরা সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পরেছিলাম। সকালে একটা সময় ছিল বাজারে যাওয়ার সেটাও বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। একদিন তো কিছু বলার আগেই পুলিশে মারধরও করলো। বাড়ি থেকে সকাল বিকাল দু’বেলা ফোন করে খোঁজ নিত। মিথ্যা করে বলতাম আমরা ভাল আছি। আমাদের কোনও অসুবিধা নেই।
কিন্তু কোনও সুবিধা আমরা পাইনি, সরকারি ভাবে খাবার দেওয়া হলেও আমাদের খাবার দেওয়া হয়নি। আলু সিদ্ধ ভাত খেয়েই দেড় মাস কাটিয়েছি। কিন্তু ওই ভাবে থাকা যায় না। ভেবেই আমরা বাড়ি ফেরা চেষ্টা করি। প্রায় ৫০ জন মিলে একটি বাস ভাড়া করে মাথাপিছু সাড়ে ছয় হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। বাড়ি ফেরার সময় সে এক অভিজ্ঞতা যেটা পাঁচ বছরের যাতায়াতে কোনওদিন হয়নি। বাসের ভাড়া মিটিয়ে দেওয়ার পর আমার কাছে মাত্র এক হাজার টাকা ছিল। সেটা দিয়ে কিছু পাউরুটি আর কলা কিনে ছিলাম। কিন্তু কাছে খাবার মজুত থাকলে খিদেও ঘন ঘন পাই। তাই দু’দিনও ওই খাবার যায়নি। তারপর থেকে একদিন আমরা সকলেই অভুক্ত ছিলাম। কোন খাবার জোটেনি। ছত্তীসগঢ়ে একটা জায়গায় আমাদের বাস থামিয়ে লুচি আর আলুর তরকারি দিয়েছিলো, আর ওড়িশাতে খিচুড়ি আর একটা তরকারি। ওই খাবার দেওয়া হয়েছে। সেটা খেয়ে কোন ভাবে এসেছি। আর আমাদের রাজ্যে যখন এসে পৌঁছলাম তখন ভেবে ছিলাম আমাদের রাজ্যে খাবারের সমস্ত কিছু ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু মুম্বই থেকে আমরা আসছি শুনে আমাদের ধারে কাছে কেউ আসেনি।
তেষ্টা মেটানোর জন্য জল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এখন বাড়িতে এসে বসে আছি কিন্তু কোন কাজ নেই। ভেবেছিলাম মুম্বইয়ে আর ফিরব না। কিন্তু এখানেও থাকা যাবে না। আমি মুম্বইয়েই ফিরতে চাই।