বাজেচ পেশ করছেন চন্দ্রিমা। —ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রের বাজেটে হতাশ হয়েছিল জেলা। এ বার রাজ্যের বাজেটেও খুশি নয় মুর্শিদাবাদ। আশা ছিল পর্যটন, আম, পাট, রেশম নিয়ে মুর্শিদাবাদের প্রতি হয়ত নজরে থাকবে রাজ্যের। কিন্তু না। জেলার বিরোধীরা একে ভোটমুখী দান খয়রাতির বাজেট বলে কটাক্ষ করেছেন। বাণিজ্য মহলও আশা করেছিল, জেলার শিল্প ক্ষেত্রে বিশেষত বিড়ি শিল্প নিয়ে বা জেলা বিভাজন নিয়ে কিছু অর্থ বরাদ্দ থাকবে রাজ্য বাজেটে। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই বিশেষ বাড়তি সুবিধে জোটেনি মুর্শিদাবাদের বরাতে।
মুর্শিদাবাদের জেলা চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “কিছু চুক্তি ভিত্তিক কর্মীর বেতন বাড়ল, ডিএ বাড়ল, তাতে জেলার বাজারে কিছু অর্থের আমদানি ঘটল ঠিকই। কিন্তু এত বড় জেলার উন্নয়নে কী উপকার হবে? জেলায় আম, রেশম, বিড়ি এবং প্লাস্টিক ক্ষেত্রে শিল্প সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু কোনও প্রস্তাব নেই। গরদ ও কোরিয়াল জিআই তকমা পেয়েছে, কিন্তু বাজার নেই বলে কোরিয়াল তৈরিতে আগ্রহ কমেছে।’’
স্বপনবাবুর বক্তব্য, ‘‘সামান্য বরাদ্দ করে তাঁত শিল্পের কোনও উপকার হবে না। বাজারে তাঁত শিল্পীদের সামগ্রী বিপণনের ব্যবস্থা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। বাজেটে তা কই? মুর্শিদাবাদে লক্ষ লক্ষ পর্যটক আসেন। অথচ পর্যটনের উন্নয়নে, ইতিহাসের উৎখননে কোনও বরাদ্দ নেই। জলপথ ব্যবহার করে পর্যটকদের আকৃষ্ট করারও চিন্তাভাবনা নেই। ফরাক্কা, বাসুদেবখালির জলপথ নিয়ে সার্ভে হয়েছে। এর সঙ্গে জঙ্গিপুর ও লালবাগকে জুড়ে একটি নদীভিত্তিক পর্যটন সার্কিট গড়ার ভাল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সরকারি বাজেটে সে সব ভাবনা চিন্তার প্রতিফলন নেই। শুধু বেতন বাড়িয়ে জেলার অর্থনীতি চাঙা হবে না।”
সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য সোমনাথ সিংহরায় বলছেন, “এটা বাজেট নয়, দান খয়রাতি। দান খয়রাতি কোনও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি হতে পারে না। দেড় বছর আগে জেলা ভাগ করেছেন। এর জন্য বরাদ্দ কোথায়? পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজের সুযোগ কোথায়?”
কংগ্রেসের জেলার সহ সভাপতি তথা প্রাক্তন সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদার বলেন, “দান ধ্যান বাড়িয়ে ভোট নেওয়ার বাজেট। বার বার দাবি উঠেছে জেলা ভাগের, থানার সংখ্যা বাড়ানোর, বিড়ি শ্রমিকদের বিকল্প কাজ। কোথায় সে সব? পাটের ফলন পর্যাপ্ত থাকলেও কোনও জুট শিল্পের প্রস্তাব নেই। আম, পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোনও কথা নেই বাজেটে।”
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুজিত দাসের মতে, “চুরি আর চুরি। জানছেন মুর্শিদাবাদ হাতছাড়া হবে। তাই সম্ভাবনাময় শিল্পে কানাকড়িও বিনিয়োগ নেই জেলায়। ভোট ফেরাতে বাজেটে ভাতার ছড়াছড়ি। পরিযায়ী শ্রমিকেরা ভিন রাজ্যে গিয়ে মারা পড়ছেন। তাঁদের জন্য কাজের কোনও ব্যবস্থা নেই।”
তবে বাজেটে খুশি তৃণমূলের সাংসদ খলিলুর রহমান। তাঁর কথায়, “কেন্দ্রীয় প্রাপ্য অর্থ বন্ধ। তার মধ্যেও লক্ষ্মীর ভান্ডার, সিভিক কর্মী সহ বহু কর্মীদের বেতন ও ভাতা বাড়ানো হয়েছে।’’