—প্রতীকী ছবি।
মাঝে ব্যবধান প্রায় দু’ মাসের। লোকসভা নির্বাচনের পর রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে গত পঞ্চায়েত ভোটের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়—প্রশাসনের কাছে এমনটাই চাইছেন এই বিধানসভা এলাকার বাসিন্দারা।
গত পঞ্চায়েত ভোট রক্তপাতহীন করতে পারেনি পুলিশ-প্রশাসন। বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন, রক্তপাত দেখেছেন নদিয়ার মানুষ। শেষ লোকসভা নির্বাচনে জেলার দক্ষিণে কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া বড় কোনও হিংসার ঘটনা সামনে আসেনি। তবে এত অল্প সময়ের ব্যবধানে এই প্রথম এই বিধানসভার উপনির্বাচনে ভোটের লাইনে দাঁড়াবেন ভোটাররা।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, ভোটের দিন প্রতিটি বুথে ছ’জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবেন। সঙ্গে থাকবেন রাজ্য পুলিশের একজন। বুথগুলিতে থাকছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। তবে অনেকেরই প্রশ্ন, উপনির্বাচনে কমিশনের নির্দেশ কি আদৌ যথাযথ ভাবে মানা হবে? কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সক্রিয় থাকতে দেখা যাবে তো? পঞ্চায়েত ভোটের মতো বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হবে না তো?
গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভার অধীন আনুলিয়া, পায়রাডাঙা, আঁইশমালি, দেবগ্রাম প্রভৃতি পঞ্চায়েতে একাধিক বুথে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ সামনে এসেছিল।প্রতিবাদে অনেক জায়গায় ভোটারেরা ভোট বাক্সে জল ঢেলে দেন। কোথাও ভোট বাক্স ফেলে দেওয়া হয় পুকুরে। যদিও লোকসভা নির্বাচনে এ ধরনের ঘটনা দেখা যায়নি। মঙ্গলবার সিপিএমের রানাঘাট এরিয়া কমিটির সম্পাদক কমল ঘোষ দাবি করেন, "কমিশনের নির্দেশমত যেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের মোতায়ন করা হয়। তাঁদের যেন জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নিষ্ক্রিয় করে না রাখা হয়।" বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার মুখপাত্র সোমনাথ কর বলেন, "ভোটারদের তাঁদের পছন্দমত প্রার্থীকে যাতে ভোট দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ করতে আমরা আগেই নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি।" তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশীষ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, "মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। তা ছাড়া পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের উপস্থিতিতেই এই উপনির্বাচন হচ্ছে।"
উপনির্বাচনের ভোট যন্ত্র প্রেরণ ও গ্রহণের জন্য মঙ্গলবার সকাল থেকে রানাঘাট কলেজের মাঠে অস্থায়ী শিবিরে ছিল চরম ব্যস্ততা। ভোটের জন্য রানাঘাট-সহ বিভিন্ন এলাকার বহু বেসরকারি বাস ও ছোট গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। ফলে এ দিন সকাল থেকেই নাকাল হতে হয়েছে কাজে বেরোনো মানুষজনকে। বীরনগরের বাসিন্দা নিলয় মণ্ডল বলেন, ''সকালে রানাঘাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এসেছিলাম। ফেরার সময় জানতে পারি, রানাঘাট- কৃষ্ণনগর ভায়া-বাদকুল্লা রুটে কোনও বাস চলছে না। উপায় না পেয়ে তিন বার টোটো বদলে বাড়ি পৌঁছেছি।" আবার যানজট সমস্যা এড়াতে এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের দক্ষিণপাড়া মোড় থেকে ওল্ড বহরমপুর রোড হয়ে জাতীয় সড়কের সংযোগকারী রাস্তায় ছোট, বড় যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ছিল।
উপনির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার বিপ্লবকুমার রায় বলেন, "ভোট যাতে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয় তার জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।"