ওসমানের রক্তেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন রামলাল 

ওসমান একা নন, রোজার সময় ওসমানের মতো প্রায় ছ’শো ছেলেদের  নিয়েই শমসেরগঞ্জে গড়ে ওঠে ‘মিশন ন্যায়’ নামে একটি সংস্থা।

Advertisement

বিমান হাজরা

অরঙ্গাবাদ শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ০০:৫২
Share:

হাসপাতালের শয্যায় রামলালের সঙ্গে ওসমান। নিজস্ব চিত্র

ওসমানের রক্তে এ যাত্রা প্রাণে বাঁচলেন রামলাল।

Advertisement

বুধবার সুতির গাজিনগরের বাড়িতে বসে বৃদ্ধ রামলাল সরকার বলছেন, “হিমোগ্লোবিন নেমে গিয়েছিল ছয়ের নীচে। রক্তশূন্য হাসপাতাল। এ দিকে পরিবারের কারও সঙ্গেই রক্তের গ্রুপ মিলছে না। ওই অবস্থায় ওসমান রক্ত না দিলে হাসপাতাল থেকে আর বাড়ি ফিরতে পারতাম না! এই ঋণ কোনও দিন ভুলব না। একটু সুস্থ হলেই ওর বাড়ি গিয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আসব।”

ওসমানের বাবা বিড়ি কারখানায় কাজ করেন। মা বিড়ি শ্রমিক। রবিবার ওসমানের কাকা মারা গিয়েছেন। বাড়ি জুড়ে শোকের আবহ। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধেয় তাঁর কাছে ফোন আসে—‘জঙ্গিপুর হাসপাতালে রামলাল সরকার নামে এক জনের ‘ও পজিটিভ’ রক্তের প্রয়োজন। রক্ত দিতে হবে রাতেই।’ তার পরে আর দু’বার ভাবেননি ওসমান। তাঁর নিজের রক্তের গ্রুপও ‘ও পজিটিভ’। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ এক বন্ধুর মোটরবাইকে জঙ্গিপুর হাসপাতালে হাজির হন সুতির সেলিমপুরের ওসমান শেখ। বছর তেইশের ওসমান রামলালকে রক্ত দিয়ে যখন বাড়ি পৌঁছলেন রাত তখন ১২টা। বুধবার সকালে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন রামলালও।

Advertisement

ওসমান একা নন, রোজার সময় ওসমানের মতো প্রায় ছ’শো ছেলেদের নিয়েই শমসেরগঞ্জে গড়ে ওঠে ‘মিশন ন্যায়’ নামে একটি সংস্থা। সংস্থার সভাপতি মোশারোফ হোসেন জানান, তাঁরা রক্তদাতাদের একটা তালিকা তৈরি করেছেন। প্রত্যেকের রক্তের গ্রুপ, নাম , ঠিকানা, ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছেন। যখনই কেউ রক্তের জন্য ফোন করেন তখনই রক্তদাতাকে সরাসরি পাঠানো হয় হাসপাতালে রোগীর কাছে। তাই রক্ত পেতে রোগীর পরিবারেরও কোনও অসুবিধা হয় না।

মঙ্গলবার শুধু রামলালবাবুকেই নয়, ওসমানের মতো সংস্থার আরও দুই সদস্য রক্ত দিতে ছুটে গিয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। ডোমকলের বাসিন্দা মাসাদুল ইসলাম শাহকে ফোন করতেই তিনি ছুটে যান মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে শমসেরগঞ্জের দেবীদাসপুরের বছর ছয়েকের উল ফাতেনাকে রক্ত দেন। এ দিনই কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ের এগারো বছরের আনোয়ার শেখ। ডোনার কার্ড থাকা সত্ত্বেও তার পরিবার রক্তের ব্যবস্থা করতে পারেনি। তার বাবা জিয়াউল হক কোনও ভাবে শমসেরগঞ্জের ওই সংস্থাটির কথা জানতে পারেন। শমসেরগঞ্জের সোলেমান শেখ মঙ্গলবার দুপুরেই আনোয়ারকে রক্ত দিয়ে এসেছেন।

সংস্থার আর এক কর্তা সাব্বির আলি বলছেন, “বাঁচা-মরা তো চিকিৎসকের হাতে। কিন্তু রক্তের অভাবে কাউকে মরতে দেব না। এটাই আমাদের পণ।’’ আর ওসমান বলছেন, ‘‘আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি মাত্র। তার বেশি কিছু নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement