পাট নিয়ে নাজেহাল চাষি

দুশ্চিন্তা শুধু আলাউদ্দিন বা অমর মণ্ডলের নয়, তামাম মুর্শিদাবাদ জুড়ে জলাভাবে সমস্যায় পড়েছেন পাটচাষিরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০১:৪৩
Share:

পাট জাঁক দেওয়া হচ্ছে এ ভাবেই। ডোমকলে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

রোদ ঝলমলে দিন। শরৎ-শরৎ আকাশ। বৃষ্টির দেখা নেই। ডোমকলের শীতলনগরের পাটচাষি আলাউদ্দিন মণ্ডল বলছেন, ‘‘আকাশ দেখে কী করব? যখন জলের দরকার, তখনই জল পাচ্ছি না। পাট নিয়ে গত বছরের মতোই অবস্থা হবে।’’

Advertisement

নওদার পাটচাষি অমর মণ্ডল বলছেন, ‘‘আকাশে শরতের মেঘ দেখলে হবে না। পুজোর বাজার করব কী ভাবে? বৃষ্টির অভাবে কী ভাবে পাট জাঁক দেব জানি না। শ্যালো মেশিনে জল দিয়ে পাট জাঁক দিতেও অনেক খরচ। তার পরে এত কিছু করে সেই পাট কত টাকায় বিক্রি করতে পারব, জানি না।’’ এই দুশ্চিন্তা শুধু আলাউদ্দিন বা অমর মণ্ডলের নয়, তামাম মুর্শিদাবাদ জুড়ে জলাভাবে সমস্যায় পড়েছেন পাটচাষিরা।

এ বছর বৃষ্টির মেজাজ দেখে কৃষি দফতর থেকে শুরু করে চাষিরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন আগেই। সেই আশঙ্কা সত্যি হওয়াতেই চরম সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। মুর্শিদাবাদের উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তাপসকুমার কুণ্ডু বলেন, ‘‘বৃষ্টির ঘাটতির কারণে পাট পচাতে গিয়ে কৃষকদের সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা আশাবাদী বৃষ্টির ঘাটতি মিটবে।’’

Advertisement

এ বারের ছবিটা কেমন? গত বছর জেলায় যেখানে ১ লক্ষ ২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। সেখানে এবারে কিছুটা হলেও কমে পাট চাষ হয়েছে ১ লক্ষ ১ হাজার হেক্টর জমিতে। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় বছরে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ১৩৭৬ মিলিমিটার। জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭৫০ মিলিমিটার। সেখানে ৬৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। চলতি বছরে অগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ১৫০ মিলিমিটার কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।

অন্য দিকে জুন-জুলাই মাসে ভরা বর্ষাকালে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাত ৫৫৯ মিলিমিটার। সেখানে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩৬৮ মিলিমিটার। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় ১৯১ মিলিমিটার ঘাটতি রয়েছে। যার ফলে খাল, বিল নয়ানজুলিতে জল নেই বললেই চলে।

নয়ানজুলির পাট পচার গন্ধ মনে করে দেয় ইদ, পুজো এসে গিয়েছে। নয়ানজুলির পরিষ্কার জলে পচানো বাহারি রঙের পাট ওঠার দিকে তাকিয়ে থাকেন মুর্শিদাবাদের গা-গঁঞ্জের লোকজন। পাট বিক্রি করে ইদ বা পুজোয় ছেলেমেয়েকে নতুন জামাকাপড় কিনে দেন। কিন্তু সেই নয়ানজুলি বৃষ্টির অভাবে জলহারা।

তাই চাষিরা পাট পচানোর জন্য হন্যে হয়ে জল খুঁজে বেড়াচ্ছেন। যাঁদের সামর্থ্য আছে তাঁরা নয়ানজুলিতে জল জমিয়ে পাট জাঁক দিচ্ছেন। ফলে বেড়ে যাচ্ছে খরচও। তার পরেও পাট জাঁক দেওয়ার জন্য লম্বা লাইন পড়ে যাচ্ছে। নয়ানজুলি বা খাল বিলে এক জনের পাট পড়তে না-পড়তেই আর এক জন এসে বলছেন, ‘‘কাকা আপনার পাট কবে উঠবে, এ বারে আমার পাটও জাঁক দিতে হবে তো।’’

ডোমকলের চাষি হারুন শাহ নয়ানজুলিতে জল ধরে পাট জাঁক দিয়েছেন। তিনি জানাচ্ছেন, এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে কম করে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। সেখানে এ বারে পাট পচাতে আরও হাজার দেড়েক টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। এ বারে চাষের যা অবস্থা তাতে পাটের উৎপাদন বিঘা প্রতি কুইন্টাল তিনেক হতে পারে। ফলে কুইন্টাল পিছু দাম চার হাজার টাকা হলে কোনও রকমে চাষের খরচ উঠবে। নইলে এ বারেও মহা বিপদে পড়তে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement