—প্রতীকী ছবি। \
মুর্শিদাবাদের তিনটি লোকসভার আসন তৃণমূলের দখলে। জেলার ২২ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ২০ টি তৃণমূলের দখলে। জেলার সবকটি পুরসভা যেমন তৃণমূলের দখলে, তেমনই অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে রয়েছে। জেলা পরিষদের সিংহভাগ সদস্যই তৃণমূলের। আর তৃণমূলের এমন শক্ত ঘাঁটিতে আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে প্রতিদিন বিক্ষোভ, প্রতিবাদ মিছিল হচ্ছে। সেই সব কর্মসূচিতে থেকে যেমন আর জি করের ঘটনার দোষীদের শাস্তির দাবি উঠছে। সেই সঙ্গে, সর্বত্র না হলেও কোথাও কোথাও, তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও স্লোগান উঠছে।
তবে কি তৃণমূলের মুর্শিদাবাদের মতো শক্ত ঘাঁটিতে তাঁদের থেকে সাধারণ মানুষ মুখ ফেরাচ্ছেন? যদি দল থেকে সাধারণ মানুষ সরে যান, তা হলে তাঁদের কীভাবে ঘরে ফেরাবে তৃণমূল। সেই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ আর জি কর ইস্যুতে যখন বহরমপুর সহ সারা মুর্শিদাবাদ উত্তাল তখন নিজেদের শক্ত ঘাঁটিতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশিত দু’দিনের কর্মসূচি ছাড়া তেমন কর্মসূচি দেখা যায়নি।
তবে বহরমপুর মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, ‘‘আজকে আমাদের আইনজীবী সেল মিছিল করেছে। দলের পক্ষ থেকে যা যা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে সেই কর্মসূচি করছি। মানুষ তার প্রতিবাদ জানিয়েছে, আমরা সেই প্রতিবাদকে সমর্থন করছি। আমাদেরও দাবি দোষী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের ফাঁসি চাই। এখন তদন্ত প্রক্রিয়া কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে। এত দেরি হচ্ছে কেন আসামি ধরতে। আসামি ধরে দ্রুত চার্জশিট দেওয়া হোক। এই দাবি থেকে আমরা সরিনি।’’
দু’একটি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলির কর্মসূচি থাকলেও অনেক জায়গায় রাজনৈতিক দলের পতাকা সরিয়ে সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, বিভিন্ন গণ সংগঠন, আইনজীবীদের সংগঠন, ব্যবসায়ীদের সংগঠন, বিভিন্ন স্কুল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে বর্তমান ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা, কলেজের অধ্যাপক অধ্যাপিকারা এসব প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নামছেন। দলীয় রাজনীতির রং সরিয়ে বহু সাধারণ মানুষও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে পথে নামছেন।
জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘মানুষ শাসক দলকে সুযোগ দেয়। কিন্তু সুযোগের অপব্যবহার করলে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয়। এখন বাংলার মানুষের শাসকদল তৃণমূল থেকে মুখ ফেরাচ্ছে।’’ বিজেপির বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শাখারভ সরকার বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। তারই প্রতিবাদে রাজ্যের অন্য জেলার সঙ্গে মুর্শিদাবাদের সাধারণ মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। শাসকদলের এই অপকর্মের বিরুদ্ধে মানুষ পথে নেমেছেন। ’’ তাঁর দাবি, ‘‘ তৃণমূল থেকে মানুষ মুখ ফেরাচ্ছেন এই জেলাতেও। আগামী দিনে তৃণমূল নিখোঁজ বলে পোস্টার পড়বে।’’
অপূর্বর পাল্টা দাবি, ‘‘এখন আমরা যখন রাস্তায় দলের পতাকা হাতে নিয়ে প্রতিবাদে নেমেছি, তখন কংগ্রেস, সিপিএম ঝান্ডা না নিয়ে মানুষের আড়ালে নেমেছে। আমরা চাইছি কেন্দ্রীয় এজেন্সি দ্রুততার সঙ্গে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে চার্জশিট জমা দিক। তদন্ত তো এখন রাজ্য সরকার, রাজ্য পুলিশের হাতে নেই। অহেতুক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করার মধ্য দিয়ে তাঁদের রাজনৈতিক দৈন্য প্রকাশ পাচ্ছে।’’
অপূর্ব আরও বলেন, ‘‘আমাদের শাখা সংগঠন সব জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচি করছে। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করছে। আমাদের অনেক লোক সাধারণ মানুষের প্রতিবাদে সামিল হচ্ছেন।’’
অপূর্বর দাবি, ‘‘আমরা চাই ভারতবর্ষে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে যাতে ৫০ দিনের মধ্যে খুন ও ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’’
বিরোধীদের সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওঁদের (বিরোধী) দল থেকে সব যোগদান করছে আমাদের দলে। তাঁদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, কর্মী সমর্থকরা প্রতিদিন কোথাও না কোথাও যোগদান করছে আমাদের দলে। তাহলে কে কার দিক থেকে মুখ ফেরাচ্ছে?’’