করোনা আবহে বন্ধ ছিল পর্যটকদের আনাগোনা। পর্যটকদের উৎসাহ দিতে প্রশাসনের উদ্যোগে পদযাত্রা দিয়ে শুরু হল পর্যটন মরসুম। সেই উপলক্ষে লালবাগের বিভিন্ন সৌধ সাজানো হল আলো দিয়ে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
পিকনিক, চড়ুইভাতি, বনভোজন- যে নামেই ডাকুন না কেন, সে একই রকম আনন্দ দেবে। আর শীতকাল ও পিকনিকের মজবুত সম্পর্ক আছে। শীত পড়তে শুরু করলেই বাঙালি কাছে পিঠে কিংবা একটু দূরে পিকনিকের জন্য বেরিয়ে পড়েন। সেই মতো শীত পড়তে শুরু করায় সামান্য হলেও পিকনিক শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে দিন দশেক পরে পিকনিক বাড়বে বলে আশাবাদী মুর্শিদাবাদে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত লোকজন। তাঁদের দাবি, শীতের শুরু থেকে পিকনিকের মরসুম শুরু হয়ে গেলেও জেলায় মূলত বড়দিনকে কেন্দ্র করে পিকনিক পার্টির সংখ্যা বেড়ে যায়। এ বারে করোনা ভীতি অনেকটাই কেটেছে। সব কিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এমনকি নবম শ্রেণির উপরে পড়ুয়াদের জন্য স্কুল কলেজের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে লোকজন ঘর ছেড়ে বেরোচ্ছেন।
জেলার পর্যটন ব্যবসায়ীদের আশা এ বারে ২৫ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে যেমন পর্যটকের ভিড় জমবে, তেমনই পিকনিক পার্টিও ভিড় জমাবে।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুর্শিদাবাদ শহরের কেল্লা নিয়ামত চত্বরে একটি অনুষ্ঠানে পুলিশ- প্রশাসনের প্রয়োজনীয় মোবাইল নম্বর-সহ একটি পর্যটক গাইডম্যাপ প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া মুর্শিদাবাদ শহরের ৩০ জন প্রশিক্ষিত ভলেন্টিয়ারকে কাজে নামানো হয়েছে। তাঁরাই পর্যটকদের গাইড করবেন। সেই সঙ্গে পর্যটন কেন্দ্র পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট বুথের উদ্বোধন করা হয়েছে। এদিনের অনুষ্ঠানে জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী, পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার-সহ উপস্থিত ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানের আগে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত লোকজন পর্যটন মরসুম উদ্যাপন উপলক্ষে পদযাত্রাও করেছেন।
পিকনিক করার ক্ষেত্রে কী ধরনের বিধিনিষেধ রয়েছে? মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণ রোধে মাস্ক পরার কথা যেমন বলা হচ্ছে, তেমনই পিকনিকে ডিজে বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘পিকনিকের মরসুমে জেলা জুড়ে অতিরিক্ত নজরদারি চালানো হবে। মুর্শিদাবাদ শহরকে সামনে রেখে জেলা জুড়ে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’’
সিটি মুর্শিদাবাদ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গত কয়েক বছর থেকে মুর্শিদাবাদের পর্যটন শিল্প মার খাচ্ছে। এনআরসি আন্দোলকে কেন্দ্র করে গন্ডগোলের জেরে জেলার পর্যটন শিল্পে মার খেয়েছিল। পরবর্তী সময়ে করোনা ও লকডাউনের জেরে একই ভাবে মার খেয়েছে। এবারে করোনা ভীতি অনেকটাই কেটেছে। ফলে আমরা আশাবাদী পর্যটক ভাল আসবেন।’’
জেলা জুড়ে অনেক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। মুর্শিদাবাদ (লালবাগ) ছাড়াও লালগোলার পদ্মার চর, রানিতলা থানার নির্মলচর, ইসলামপুরের ভৈরবের পাড়, সাগরপাড়া থানার সাগরপাড়া ঝিল, জলঙ্গির পদ্মার পাড়ে লোকজন পিকনিক করতে ভিড় জমান। আবার ফরাক্কায় গঙ্গার পাড়ে বা মণীগ্রাম বনাঞ্চল, আহিরণ বনাঞ্চলে বহু মানুষ পিকনিকের জন্য ভিড় জমান। তবে সেগুলিতে পিকনিকের অনুমতি না লাগলেও রঘুনাথগঞ্জের সুভাষদ্বীপে অনুমতি নিয়ে পিকনিক করতে হয়। জঙ্গিপুর পুরসভা ইতিমধ্যে সুভাষ দ্বীপকে পিকনিকের জন্য সাজিয়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে। জঙ্গিপুর পুরসভার প্রশাসক মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘‘পিকনিকে আসা লোকজন যাতে করোনা সুরক্ষাবিধি মেনে চলেন, মাস্ক পরে সবুজদ্বীপে ঢোকেন সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তেমনই ডিজে নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’’
পিকনিক পার্টির গাড়ি ধীর গতিতে চালানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে পুলিশের পক্ষ থেকে।