জলে ভাসছে স্কুল, হুঁশ নেই কারও

২০১৫ সালে জমে থাকা জলে  ডুবে মৃত্যু হয়েছিল বছর আটেকের  এক ছাত্রের। তার পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয় ধুলিয়ানের মহব্বতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই শিশুর মৃত্যুর পরে টনক নড়ে প্রশাসনের। নালা কেটে জল বের করে দেয় প্রশাসন।  

Advertisement

বিমান হাজরা

শমসেরগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১৮
Share:

প্রতীকী ছবি

অতীত থেকেও শিক্ষা নেয়নি প্রশাসন ও শিক্ষা দফতর। এ বারেও তাই জলে ভাসছে গোটা স্কুল। আতঙ্কে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে পড়ুয়ারা। ফলে বন্ধ পঠন-পাঠনও।

Advertisement

২০১৫ সালে জমে থাকা জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছিল বছর আটেকের এক ছাত্রের। তার পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয় ধুলিয়ানের মহব্বতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই শিশুর মৃত্যুর পরে টনক নড়ে প্রশাসনের। নালা কেটে জল বের করে দেয় প্রশাসন।

এ বারেও মহব্বতপুরের ওই প্রাথমিক স্কুল জলে ডুবে রয়েছে। পুজোর ছুটির পরে বৃহস্পতিবার স্কুল খুললেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। স্কুলের নীচতলার চারটি শ্রেণিকক্ষ, রান্নাঘর, শৌচাগার ও নলকূপ জলের তলায়। আতঙ্কে অভিভাবকেরা স্কুলে পাঠাচ্ছেন না ছেলেমেয়েদের। অভিভাবকদের অভিযোগ, জমা জলে ডুবে গিয়েই চার বছর আগে মারা যায় বছর আটেকের মানোয়ার হোসেনে।

Advertisement

স্কুলের পাশেই বাড়ি মানোয়ারের দাদা ইস্তেহাক আহমেদের। ইস্তেহাক বলছেন, “সে বার আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পরে প্রশাসনের টনক নড়েছিল। এ বারেও আতঙ্কে আছেন গ্রামবাসীরা। প্রশাসন কি ফের কোনও বিপদের অপেক্ষায় আছে?’’

ওই প্রাথমিক স্কুলে ৩৫৯ জন ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। শিক্ষকের সংখ্যা পাঁচ। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সহিদুল ইসলাম বলছেন, ‘‘স্কুলের চতুর্দিকে জল। আমরা প্যান্ট গুটিয়ে কোনও রকমে স্কুলে ঢুকি। ধুলিয়ানের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক, বিডিও, পঞ্চায়েত প্রধানকে স্কুলের পরিস্থিতির কথা জানিয়েছি। কিন্তু চার দিন কেটে গেলেও পরিস্থিতি এরই রয়েছে। বিপদের আশঙ্কায় পড়ুয়াদের স্কুলে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে মিডডে মিলও।’’

চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মহম্মদ নাসিম আলম। তার বাবা জাহাঙ্গীর আলি বলছেন, “দীর্ঘ দিন ধরে স্কুল জলে ভাসছে। স্কুল খোলার পরেও প্রশাসনের কর্তাদের কোনও হেলদোল নেই। কেউ এক বার এসেও দেখে যাননি অবস্থাটা। সাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে স্কুলের ঘরে। জল আর সাপের মধ্যে কোন সাহসে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাই, বলুন তো!’’

গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য এমদাদুল হক বলছেন, “আমি বিডিওকে ঘটনার কথা জানিয়েছি। পল্টন সেতুর নীচে যে কালভার্ট রয়েছে সেটা কাটিয়ে দিলেই এই জমা জল বেরিয়ে যাবে। আপতত এই ব্যবস্থা করা জরুরি। পরে এই এলাকার জল নিকাশির জন্য ৯ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প জমা দেওয়া আছে গ্রাম পঞ্চায়েতে। সে কাজ সম্পূর্ণ বলে এই সমস্যা মিটে যাবে।” ভাসাই পাইকর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আব্দুর রউফ বলছেন, “এই এলাকায় আগে জল জমত না। কিন্তু জল নিকাশি কালভার্টগুলি বন্ধ করে জবর দখল হয়ে রয়েছে সরকারি জমি। স্থায়ী সমাধানে যে অর্থ দরকার তা পঞ্চায়েতের নেই। তাই বিডিও-র হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।”

বিডিও জয়দীপ চক্রবর্তী ও ধুলিয়ানের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক আমজাদ আলি কেউই ফোন ধরেননি। স্কুলের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তাঁদের এসএমএস করা হলে বিডিও পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিলেও বিদ্যালয় পরিদর্শক কোনও জবাব দেননি। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সহিদুল ইসলাম বলছেন, ‘‘জমা জল না সরলে ছাত্রদের স্কুলে আসতে বলব কোন ভরসায় ? যত দিন না জমা জল সরছে তত দিন পঠন-পাঠন বন্ধ রাখা ছাড়া কী-ই বা করার আছে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement