প্রতীকী ছবি।
ভরতপুর বিধানসভা কেন্দ্র ভরতপুর ১ ও ২ ব্লক নিয়ে গঠিত। এই কেন্দ্রের মধ্যে কোনও পুরসভা নেই। ভরতপুর-১ ব্লকের ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ভরতপুর ২ ব্লকের ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত মোট ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে বিধানসভা। আছে দু’টি পঞ্চায়েত সমিতি। ওই কেন্দ্রের একদিকে পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানা। অন্য দিকে, বীরভূম জেলার সীমান্ত লাভপুর থানা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এই কেন্দ্রটি বাম আমলে বামফ্রন্টের শরিক দল আরএসপির দখলে ছিল। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের সময়েও ওই কেন্দ্রে তাদেরই প্রভাব ছিল সবেচেয়ে বেশি। বহু চেষ্টা করেও সেই প্রভাবে থাবা বসাতে পারেনি কংগ্রেস কিংবা তৃণমূল। কান্দি মহকুমার চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ভরতপুরই একমাত্র কেন্দ্র যেখান থেকে আরএসপি প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৬ সালের ভোটে বাম ও কংগ্রেসের জোট হলেও ওই কেন্দ্রে আরএসপি আলাদা ভাবে লড়াই করেছিল। চর্তুমুখী লড়াইয়ের পরে ওই কেন্দ্রের মানুষ উন্নয়নের জন্য অধীর চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কংগ্রেসের কমলেশ চট্টোপাধ্যায়ের ওপর ভরসা করেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে এলাকার কংগ্রেসকর্মীদের কয়েক জন শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন। তবু ভোটারদের আস্থা ছিল কংগ্রেস প্রার্থীর ওপরই। আগামী বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্র নিজেদের দখলে রাখাই কংগ্রেসের কাছে
বড় চ্যালেঞ্জ।
যদিও তৃণমূল নেতৃত্বদের দাবি, ‘‘বিধায়ক হওয়ার পর কমলেশবাবু এলাকায় উন্নয়নমূলক কোনও কাজ করেননি। এলাকায় তাঁর তেমন জনসংযোগও নেই।’’ বাবলা নদীর ওপর লোহাদহ ও টেঁয়া ঘাটে সেতুর দাবি বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের। ওই সেতু এখনও তৈরি না হওয়ায় বাসিন্দাদের হতাশাও রয়েছে। যদিও বিধায়ক বলেন, “ওই দু’টি সেতুর দাবি একাধিকবার বিধানসভায় তুলেছি। কিন্তু রাজ্য সরকার দাবিকে গুরুত্বই দেয় না।’’ তাঁর দাবি, “বিধায়ক উন্নয়ন তহবিলের টাকা থেকে অনুদান আমি কয়েকবার এলাকায় গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে দিয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল নেতারা ওই টাকা ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করেছেন বলে প্রধানদের কাছে জানতে পেরেছি।” এদিকে, এই কেন্দ্রে ভোট বাড়ার ব্যাপারে আশাবাদী বিজেপি-ও। বিজেপি নেতা ইমনকল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ভরতপুরের কী উন্নয়ন হয়েছে, তা বাসিন্দাদের কাছ থেকে শুনলেই বোঝা যাবে। রাজ্য সরকার নয়, বিধায়কও নয়, এলাকার উন্নয়নের কথা কেউ ভাবেনি।’’
এই কেন্দ্রে এখনও পর্যন্ত সভা, মিছিল ও অনান্য রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে এগিয়ে আছে রাজ্যের শাসকদল। তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক গত কয়েক বছরে অনেকটা বে়ড়েছে বলে খবর। তৃণমূলের অভিযোগ, ভরতপুরের ভোটাররা কংগ্রেসের প্রার্থীকে বিধায়ক নির্বাচন করলেও এলাকার উন্নতি হয়নি। বিধায়ক তাঁর তহবিল থেকে পাড়ার ছোট ছোট কয়েকটি ঢালা রাস্তা করেছেন, যেটা পঞ্চায়েতের কাজ।’’ তৃণমূলের দাবি, তারা ভরতপুর ১ ব্লকে বিদ্যুৎ পরিষেবার উন্নতিতে পাওয়ার হাউস তৈরি করেছে। ভরতপুর-২ ব্লকে পাওয়ার হাউসের উন্নতি হয়েছে, কান্দি-সালার রাজ্য সড়কেরও উন্নতি হয়েছে। ওই কেন্দ্রে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক মহম্মদ আজহারউদ্দিনের দাবি, “সাধারণ মানুষ দেখেছেন রাজ্য সরকার ভরতপুর কেন্দ্রে কী কী উন্নয়ন করেছে।’’ তবে এলাকার বাড়িতে খোঁজ নিয়ে উল্টো কথাও শোনা গেল। কংগ্রেস বিধায়কের আমলে এলাকার প্রভূত উন্নতি হয়েছে বলেও অনেক ভোটার স্পষ্টই জানিয়েছেন।