গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
ভক্ত এবং দর্শনার্থীর নজর ঠাকুরে। আর দর্শনার্থীদের পকেটে নজর কেপমার গ্যাংয়ের। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড়ের মধ্যেই মিশে থাকছে সোদপুর আর দমদম গ্যাং। এরাই ভাবাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসনকে। ওই দলগুলোকে সামলে সাধারণ মানুষের জগদ্ধাত্রী-দর্শন আনন্দময় করাটাই চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছে প্রশাসন। তার জন্য নেওয়া হল ‘বিশেষ ব্যবস্থা।’
কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোয় বাড়তি ভিড় সামাল দিতে সোমবার বিকেল থেকেই শহরে যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা পুলিশ। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত জারি থাকবে এই বিধিনিষেধ। এই ক’দিন শহরের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না ভারি যানবাহন। এন্ট্রি নেই এমনকি টোটোরও। ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রেও থাকছে কড়া নিষেধাজ্ঞা। বিশেষ কিছু জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে ছাড় মিলবে ব্যক্তিগত গাড়িতে। ভিড় সামলে শহর সচল রাখার পাশাপাশি, পকেটমার চক্রও পুলিশের কাছে বড় মাথাব্যথা। দর্শনার্থীদের ভিড়ে মিশে থেকে নিমেষে পকেট সাফাইয়ে ‘দক্ষ’ বহিরাগতদের সামলাতে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করছে প্রশাসন। পুলিশ সূত্রের খবর, দমদম আর সোদপুর থেকে আগত কয়েকটি পকেটমারের দল মিশে থাকতে পারে ভিড়ে। তাই কৃষ্ণনগরের বড় পুজোগুলোর পাশাপাশি ছোট পুজোগুলোতে থাকছে ‘বিশেষ নজরদারি’। সাধারণের ভিড়ে মিশে থাকা পকেটমারদের আটকাতে সেই ভিড়েই থাকবে সাদা পোশাকের পুলিশ। আর এই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে মূলত সাদা পোশাকের মহিলা পুলিশের উপর। নদিয়া-সহ সংলগ্ন জেলাগুলো থেকে কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে আসা দর্শনার্থীদের সুরক্ষা দিতে এই বাড়তি তৎপরতা নিয়েছে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, ভিড়ের নিরিখে এ বার অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে যেতে পারে কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো। মঙ্গলবার পুজোর দিন ও বুধবার প্রথম ভাসানের দিন কয়েক লক্ষ লোকের জমায়েতের সম্ভাবনা রয়েছে শহরে। কৃষ্ণনগরের হাই স্ট্রিট, পোস্ট অফিস মোড়, সদরের মোড়, নেদের পাড়া, রাজবাড়ি এবং নাজিরা পড়ার মতো যে জায়গাগুলোয় অতিরিক্ত দর্শনার্থীর সমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে বাড়তি নজরদারি। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা দফতর সূত্রে খবর, দমদম এবং সোদপুর এলাকার তিনটি কেপমার গ্যাং ইতিমধ্যে কৃষ্ণনগর শহরের ঢুকেছে। ওই দলগুলোর লক্ষ্য অতিরিক্ত ভিড়। দর্শনার্থীদের ক্ষণিকের অসাবধানতার সুযোগ নিয়ে মোবাইল থেকে মানিব্যাগ, অলঙ্কার থেকে হাতঘড়ি, চোখের পলকে ‘নেই’ করে দেওয়ার দক্ষতা রয়েছে এদের। ওই চক্র থেকে দর্শনার্থীদের সুরক্ষা দিতে ভিড়ের মধ্যে মিশে থাকবে সাদা পোশাকের পুলিশ। মহিলাদের সুরক্ষার জন্য থাকছে সাদা পোশাকের মহিলা পুলিশের ব্যবস্থা।
পুলিশের এই ব্যবস্থার কথা শুনে খুশি সাধারণ মানুষ। তবে আশঙ্কা থাকছেই। যেমন কৃষ্ণনগর নাজিরা পাড়ার বাসিন্দা মুকুলিকা রক্ষিত। তিনি জানান, গত বছর জগদ্ধাত্রী পুজোয় ‘পকেটমার চক্র’ যে ভাবে দাপিয়ে বেড়িয়েছে, সেই ভয় এ বছরও কাজ করবে আমার মনে।’’ তিনি জানান, তাঁর বেশ কয়েক জন পরিচিত গত বছর দামি জিনিস খুইয়েছেন। মুকুলিকা বলেন, ‘‘তবে পুলিশ যে ভাবে এ বার তৎপর শুনছি, তাতে কিছুটা আশ্বস্ত লাগছে। তবুও পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত হতে পারছি না।’’
জগদ্ধাত্রী পুজোয় পুলিশি প্রস্তুতি নিয়ে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সঞ্জয়কুমার মাকওয়ান বলেন, ‘‘পুজোর অনেক আগে থেকেই এ বার ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ‘নো এন্ট্রি’ থেকে শুরু করে পুলিশি ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে। পকেটমারদের থেকে সুরক্ষা দিতে বাড়তি ব্যবস্থাও থাকছে।’’