ঠাকুর দেখতে ফোন মেয়ের 

পুলিশের পুজো নেই। পরিবারের সদস্যেরা সকলে মিলে ঠাকুর দেখতে বের হলেও বাড়ির পুলিশ কর্তাটির সঙ্গ কল্পনাও করেন না তাঁরা।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০৩
Share:

ফাইল চিত্র।

সে বার নতুন বিয়ে করেছেন। প্রথম থেকে স্ত্রীর একটাই দাবি ছিল, একটা দিন এক সঙ্গে পুজোর বাজার করতে যেতে হবে। প্রতি দিন বলছিলেন— আজ না কাল। শেষ পর্যন্ত সপ্তমীর রাতে স্ত্রী ফোন করে জানতে চান পুজোয় এক দিনের জন্যও কি তিনি বাড়িতে আসবেন?

Advertisement

এ প্রান্তের উত্তর ছিল— ‘না’।

সেই যে ও প্রান্তের ফোন খট করে কেটে গেল, তার পর দীর্ঘ দিন চুপচাপ। এসআই যখন ছুটি নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় পেলেন, তত দিনে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। পদোন্নতির ধাপ পেরিয়ে এখন তিনি জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল ইনস্পেক্টর। বলছেন, “বিয়ের প্রথম বছরই আমার স্ত্রী বুঝে নিয়েছিলেন আমার থেকে টাকা ছাড়া পাওয়ার কিছু নেই।”

Advertisement

পুলিশের পুজো নেই। পরিবারের সদস্যেরা সকলে মিলে ঠাকুর দেখতে বের হলেও বাড়ির পুলিশ কর্তাটির সঙ্গ কল্পনাও করেন না তাঁরা। না ঘুমিয়ে, না খেয়ে পুজোয় ডিউটি করেন পুলিশকর্মীরা। স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ঠাকুর দেখতে যাওয়া অলীক কল্পনা। ওই সময়ে দু’ঘণ্টা ঘুমই তাঁদের কাছে সব চেয়ে কাঙ্ক্ষিত বিষয়।

প্রায় ১৪ বছর ডিউটির বাইরে পুজো দেখার সুযোগ পাননি জেলার এক ওসি। মেয়ের বয়স নয়। গত বছর অষ্টমীর দিন তিনি ভিড় সামাল দিচ্ছেন। ঠিক তখনই ফোন এসেছিল। ও প্রান্ত থেকে আহ্লাদি গলায় মেয়ে বলেছিল, “তোমার বড় সাহেবকে বলো না, কাল ছুটি দিতে। তোমার সঙ্গে ঠাকুর দেখব। সবাই বাবার সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাচ্ছে।” মেয়ের কথার কোনও উত্তর দিতে পারেননি। শুধু ফোনটা ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, “এমনিতে পুলিশকর্মীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। কোনও ভাবেই এই উৎসবের মরসুমে কাউকে ছুটি দেওয়া সম্ভব হয় না। আমরা বুঝি সবটা। কিন্তু কিছু করার থাকে না।”

অনেকেই তাই বছরের অন্য সময়ে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে পুজোর সময় পরিবারকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেন। জেলার এক পোড় খাওয়া বলছেন, “প্রতি বার বউকে বলি পুজোর পরে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাব। গত বছর ছুটি পেয়েছিলাম। তা-ও চার দিনের।”

নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনান এক ইনস্পেক্টর। বলেন, “অনেক কষ্টে পাঁচ দিনের ছুটির ব্যবস্থা করলাম এক বার। থানার সামনে গাড়ি দাঁড়িয়ে। ভিতরে মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী। তখনই ল্যান্ড ফোনে ডাক এসপি-র। ছুটি বাতিল। এক নেতা খুন হয়ে গিয়েছে।”

শহর বা জেলা— প্রতি পুজোয় পুলিশকর্মীদের একই পরিস্থিতি। পুজো যত এগিয়ে আসে, আলো ঝলমলে রাস্তায় ওঁরা কাজ করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement