জলবারুদ ১

ঘাটের দখল নিয়ে পুলিশকেও ধমকায় ওরা

বছরখানেক আগেও এই ঘাটের দখল নিয়েই ঘোষপাড়া এলাকায় খুন হয়েছিল এক যুবক।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

জলঙ্গি শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:২৬
Share:

চৈত্র বৈশাখে সেখানে হাঁটুজল, আর বর্ষায় ফুলে ফেঁপে ওঠে পদ্মার শাখা নদীর এই ঘাট। ঘাটের দখল নিয়ে লড়াইয়া শুরু হয় সেই বৃষ্টি মরসুমেই।

Advertisement

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কেন এমন মরা ঘাট নিয়ে বছরের পর বছর ধরে লড়াই চলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ কেবল রাজনৈতিক দল নয়, পুলিশের একাংশও সঙ্গ দেয় ঘাটের ইজারাদারের সঙ্গে।

পদ্মাপাড়ের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, দিনভর নৌকা চালিয়ে মেরে কেটে হাজার খানেক টাকা হবে কিনা সেটাও সন্দেহ আছে এই ঘাটে। কিন্তু আসল মধুটা লুকিয়ে আছে অন্য জায়গায়। এখনও চোরাগোপ্তা বা পুলিশ ও বিএসএফের সঙ্গে বোঝাপড়া করে যে পাচারটা চলে সীমান্তে তার কাণ্ডারি এই ঘাটের মালিক। নৌকার হাল ধরার পাশাপাশি সীমান্তের পাচারের হাল ধরে থাকে ঘাটের মাঝি। তা ছাড়া পুলিশ বা বিএসএফের চোখে ফাঁকি দিলেও ঘাটের মালিক মাঝিদের ফাঁকি দেওয়ার উপায় নেই, ফলে পাচারকারীদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েই পেরোতে হয় সীমান্তের এই ঘাট। আর তার সৌজন্যে বছরভর মোটা অঙ্কের টাকা আসে ঘাট থেকে।

Advertisement

বছরখানেক আগেও এই ঘাটের দখল নিয়েই ঘোষপাড়া এলাকায় খুন হয়েছিল এক যুবক। দিন কয়েক আগে বোমা ফেটে মৃত্যু হয়েছে তিন যুবকের। আর সেই মৃত্যুরও কারণ এই ঘাটের দখলদারির লড়াই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক বাসিন্দার দাবি, লড়াই বাম আমলেও ছিল, কিন্তু তখন শাসক দলের মদত পুষ্ট লোক ছাড়া ঘাটের কাছে কেউ ঘেঁষতে পারেনি, আর এখন দুই গোষ্ঠীর ভিড়েছে শাসকদলে। ফলে কিছুটা হলেও বিড়ম্বনায় পড়েছে শাসক দলের নেতৃত্ব এবং পুলিশ। বিশেষ করে জলঙ্গির পুলিশের অবস্থা এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি! কোন নেতার কথা ফেলে কার কথা রাখবেন!

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘ঘাট নিয়ে ঘোষপাড়া এলাকার গণ্ডগোল চেনা ছবি। পুলিশ অনেকবারই ওই অবস্থার লাগাম টানতে গিয়েছে, কিন্তু বরাবরই শাসক দলের মদতেই এই গণ্ডগোল গড়িয়ে গিয়েছে সীমান্তের গ্রামে।

জলঙ্গির ব্লক কংগ্রেস সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মোল্লার বাড়িও ঘোষপাড়া এলাকায়, ঘাটের নাড়ি নক্ষত্র তার জানা। তিনি বলছেন, ‘‘মূলত পাচারের মধু থাকার কারণেই ঘাট নিয়ে এমন লড়াই লাগাতার চলছে। বিশেষ করে দুই পক্ষই শাসকদলের যোগ দেওয়ায় গণ্ডগোল অন্যমাত্রা পেয়েছে। তবে পুলিশ ইচ্ছে করলে এই ঘটনার লাগাম টানতে পারে।’’

সিপিএমের জলঙ্গি এরিয়া কমিটির সম্পাদক ইমরান হোসেনের দাবি, ‘‘ঘাটের গণ্ডগোলে সরাসরি শাসক দল এবং পুলিশ জড়িয়ে আছে। আর আছে বলেই গণ্ডগোল জিইয়ে আছে। পুলিশ বিষয়টি কড়া হাতে দমন না করলে আরও অনেক প্রাণ যাবে ওই এলাকায়।’’

যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবু তাহের খান বলছেন, ‘‘ঘাট নিয়ে গণ্ডগোল পুরোপুরি সমাজবিরোধীদের বিষয়, পাচারকারীদের বিষয়। এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই, পুলিশকে বলেছি গোটা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে।’’

(চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement