—ফাইল চিত্র।
১৪ দিন ধরে পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন ডাকাত সর্দার। লক্ষ্য ছিল— তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বড় চক্রের নাগাল পাওয়া। তা করতে গিয়েই কালঘাম ছুটছে তদন্তকারীদের। কাজের কাজ তো হচ্ছেই না, উল্টে ‘কুখ্যাত দুষ্কৃতী’ সেই কুন্দন সিংহের আবদার মেটাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে। কখনও সিগারেটের আবদার করে বসছেন, কখনও ব্র্যান্ডেড টি-শার্ট। স্নানের সময়ে আবার তাঁর সুগন্ধি সাবান চাই!
গত মাসে নদিয়ার রানাঘাটে একটি নামী স্বর্ণবিপণিতে দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন কুন্দন। কুন্দন ছাড়াও আরও পাঁচ জন গ্রেফতার হয়েছিলেন ওই ডাকাতির ঘটনায়। আরও কেউ জড়িত ছিলেন কি না, এখন তারই খোঁজ পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা। রানাঘাটের ঘটনা যে সময়ে ঘটেছিল, প্রায় একই সময়ে পুরুলিয়া শহরেও একটি স্বর্ণবিপণিতেও ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পুলিশি তদন্তে দুই ঘটনার মধ্যে যোগসূত্রও মিলেছে। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, পুরুলিয়ার ডাকাতির ছক কষা হয়েছিল জেলের ভিতরে বসে। মূল অভিযুক্ত যিনি, তিনি বর্তমানে ভিন্রাজ্যের জেলে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে নাকি কুন্দনের যোগাযোগ ছিল। শুধু তা-ই নয়, ওই ‘অপরাধী’র হাত ধরেই অপরাধ জগতে প্রবেশ ‘ফাইটার’ কুন্দনের। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, এ নিয়ে একাধিক বার কুন্দনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই মুখ খুলতে চাইছেন না রানাঘাটের ‘ডাকাত সর্দার’।
তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, জেলা পুলিশের পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশ এবং বিহারের বিশেষ তদন্তকারী দলও কুন্দনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসেছিল। ওই সূত্রেরই দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রশ্নের ‘ইচ্ছেমতো’ উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন কুন্দন। ইচ্ছে না হলে চাপের মুখেও নিঃস্পৃহ থাকছেন। তাঁর ইস্পাতকঠিন মনোভাবে কার্যত অবাক দুঁদে পুলিশকর্তারাও। কিন্তু পুলিশ সূত্রের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময়টুকু বাদ দিয়ে বাকিটা খোশমেজাজেই থাকেন কুন্দন। কখনও পায়ের উপর পা তুলে দিনরাত গেয়ে চলেছেন ভোজপুরি গান। মাঝেমধ্যে প্রহরার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীদের কাছে চাইছেন সিগারেটও। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘ঠিক সময়ে ওর ঘুম, খাওয়াদাওয়া দরকার। সময় পেলেই আবার শরীরচর্চা! আমাদের বন্দুক নিয়েও মাঝেমধ্যে মশকরা করে। আর যে ক’জন গ্রেফতার হয়েছে, ওরা তো ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছে। নাওয়াখাওয়া ভুলে হাপুস নয়নে কেঁদেই চলেছে। কিন্তু এই কুন্দন সিংহকে সামলাতে গিয়ে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমাদের!’’
প্রসঙ্গত, গ্রেফতার হওয়ার পর কুন্দনের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁর বিরুদ্ধে এ রাজ্যে ঘটা একাধিক অপরাধের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠছে। আবার কুন্দনই নাকি দুর্গাপুরের কয়লা কারবারি রাজু ঝা খুনের মূল চক্রী। সূত্রের দাবি, গাঁজা এবং হেরোইনে আসক্ত কুন্দন মূলত নেশার টাকা জোগাড় করতেই ‘শুটার’ হন। এর মধ্যে মধ্যপ্রদেশের একটি খুনের ঘটনাতেও তাঁর নাম উঠে এসেছে।