লালগোলা থানার সামনে বাম যুব সংগঠনের কর্মসূচিতে অশান্তি। —নিজস্ব চিত্র।
প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরির প্রতিশ্রুতিতে লক্ষ লক্ষ টাকা দিলেও তা পাননি। উল্টে প্রতারণার শিকার হয়ে সে টাকা খোয়া গিয়েছে। তার পর আত্মঘাতী হন মুর্শিদাবাদের লালগোলার এক যুবক। এমনই অভিযোগ করেছিল ওই যুবকের পরিবার। এর তদন্তে পুলিশি গাফিলতির অভিযোগে বাম যুব সংগঠনের কর্মী-সমর্থকেরা ‘থানা ঘেরাও কর্মসূচি’ ঘিরে ধুন্ধুমার বাধল লালগোলায়। শনিবার বিকেলে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধে দু’পক্ষেরই কয়েক জন আহত বলে দাবি। যদিও একে ‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বাম-বিজেপি-কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ বোঝাপড়া’ বলে তকমা দিয়েছে শাসকদল।
স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার বিকেল ৪টে নাগাদ বাম যুব নেতা-কর্মীদের কর্মসূচির কথা মাথায় রেখে লালগোলা থানার প্রধান ফটকের অনেক আগে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তাবেষ্টনী ছিল। প্রথমে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ব্যারিকেড ছিল। পরের ব্যারিকেডের দায়িত্ব ছিলেন লাঠিধারী পুলিশকর্মীরা। সবশেষে ছিলেন পুলিশ আধিকারিকেরা। তবে বাম যুবদের মিছিল থানা চত্বরে পৌঁছতেই পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়। ব্যারিকেড ভেঙে থানা চত্বরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে মিছিল। পুলিশ বাধা দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
মূর্শিবাবাদ জেলা পুলিশের দাবি, জনতা-পুলিশের খণ্ডযুদ্ধে আহত বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। অন্য দিকে, বাম যুব সংগঠনের পাল্টা দাবি, ‘‘পুলিশের লাঠির আঘাতে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন তাঁদের বেশ কয়েক জন কর্মী।’’ ঘটনাস্থলে বিরাট পুলিশবাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত-সহ যথাযথ পদক্ষেপের আশ্বাস দিলে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন বাম যুবরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, ২৭ সেপ্টেম্বর লালগোলার যুবক আব্দুর রহমান ‘অস্বাভাবিক মৃত্যুর’ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন যুবকের বাবা মফিজুদ্দিন শেখ। পরিবারের দাবি, প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরির জন্য দিবাকর কনুই নামের এক ব্যক্তিকে সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন আব্দুর। তবে তাঁর চাকরি হয়নি। এমনকি, সে টাকাও ফেরত পাননি। ২৭ সেপ্টেম্বর নিজের বাড়ির কাছেই একটি চাষের জমিতে আব্দুর ‘আত্মঘাতী’ হন বলে অভিযোগ। উদ্ধার হয়েছিল একটি সুইসাইড নোটও। তাতে দাবি, প্রাথমিকে চাকরির জন্য দিবাকরকে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর চাকরি হয়নি। উল্টে ফেরত দেওয়া হয়নি তাঁর টাকা-সহ অন্যান্য নথিও। সে জন্য আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। সুইসাইড নোটে নাম থাকা দিবাকরকে ইতিমধ্যেই সোমবার মাঝরাতে বীরভূম থেকে গ্রেফতার করেছে লালগোলা থানার পুলিশ। মঙ্গলবার অভিযুক্তকে লালগোলা মহাকুম আদালতে হাজির করা হয়। বিচারকের নির্দেশে অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।
এই ঘটনায় ডিওয়াইএফআইয়ের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক সন্দীপন দাসের দাবি, ‘‘চাকরির নামে প্রতারণায় যে ভাবে এক তরতাজা যুবককে প্রাণ হারাতে হয়েছে, তার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে তদন্তের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আজ ট্রেলার দেখালাম। ব্যবস্থা না হলে বাকি পিকচার দেখাব।’’ যদিও মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘প্রধান অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিশেষ দল গঠন করে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ করা হবে।’’
শনিবারের কর্মসূচিতে বামেদের সমর্থন দিয়েছে কংগ্রেস। বহরমপুরের সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘কারা প্রতিবাদ করছে সেটা বড় কথা নয়। কোন ইস্যুতে প্রতিবাদ হচ্ছে, সেটাই বড় কথা। বামেদের এই প্রতিবাদের পূর্ণ নৈতিক সমর্থন রয়েছে আমাদের।’’ কিন্তু এতে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, ‘‘আজকের কর্মসূচিতে শুধু কংগ্রেসই নয়, বিজেপিরাও ছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে বাম-বিজেপি-কংগ্রেসের যে অভ্যন্তরীণ বোঝাপড়া, সেটাই ঝালিয়ে নেওয়া হল!’’