—প্রতীকী ছবি
পরিবারের লোকজনের দাবি, ধর্ষণ করে প্রমাণ লোপাট করতে খুন করা হয়েছে কিশোরীকে। অভিযোগ, পুলিশ ধর্ষণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তা নিয়ে ক্ষোভ জমছিল। ময়না-তদন্তের পর হাসপাতালে থেকে কিশোরীর দেহ ফিরতে সেই ক্ষোভ কার্যত দাবানলের চেহারা নিল। অভিযুক্তের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কয়েক ঘণ্টা ধরে পথ অবরোধ করলেন উত্তেজিত জনতা। পরে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা এসে যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। শনিবার পলাশিপাড়ার পলশুন্ডার ঘটনা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মামার বাড়ি থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে যায় ওই কিশোরী। পরে তাকে রাস্তার পাশে এক পুকুরে হাত-পা বাঁধা বিবস্ত্র অবস্থায় ভাসতে দেখা যায়। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
কিশোরীর পরিবারের লোকজন জানান, কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ময়না-তদন্তের পর শুক্রবার রাতে কিশোরীর দেহ পলাশিপাড়ার পলশুন্ডার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। রাতে তাকে কবর দিতে আপত্তি করেন অনেকে। দেহ বাড়িতে রেখে নিহত কিশোরীর দাদা কুলগাছি বাজারে গিয়ে রাস্তা অবরোধ শুরু করেন। তাঁর পাশে জড়ো হতে থাকেন আশপাশের লোকজন। পরে একে একে পলশুন্ডা, কুলগাছি, বারুইপাড়া, ছোট নলদহ, বড় নলদহ, বরেয়া এলাকার মানুষ সামিল হন সেই অবরোধে। সকাল ৭টা থেকে কুলগাছিতে বেতাই-পলাশি রাজ্য সড়ক অবরোধ করা হয়।
অবরোধকারীদের অভিযোগ, পলাশিপাড়া থানার পুলিশ ঠিক ভাবে তদন্ত করছে না। কিশোরীকে ধর্ষণ করার পরে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় তাকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ যে ভাবে তদন্ত করছে তাতে ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। এখানে ‘আর্থিক লেনদেন’ থাকতে পারে বলে তাঁদের অভিযোগ। কিশোরীর মা বলেন, “থানায় অভিযোগের সময় খুনের পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনা পুলিশকে জানানো হয়েছে। তদন্তে পুলিশের গাফিলতি আছে।” কিশোরীর দাদা বলেন, “বাড়িতে এই পরিস্থিতি। তার মধ্যে তাড়াহুড়োয় থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। তবে বারবার ধর্ষণের ঘটনাটি পুলিশকে বলা হয়েছে। তদন্তের গাফিলতি হচ্ছে। এরই প্রতিবাদে শনিবার সকালে রাজ্য সড়ক অবরোধ করি। তখন সাধারণ মানুষ ও গ্রামবাসীরা আমার পাশে এসে দাঁড়ান।’’
বিক্ষোভকারী আইয়ুব আলি শেখ বলছেন, “একটি নাবালিকাকে পৈশাচিক ভাবে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এর পরেও পুলিশ ঠিক ভাবে তদন্ত করছে না।” বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুকুর থেকে কিশোরীকে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। হাত-পা বাঁধা ছিল। সাধারণ মানুষ যেখানে বুঝতে পারছে যে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, সেখানে পুলিশ কেন তা বুঝতে পারছে না। পুলিশ ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চাইছে। তাঁদের দাবি, এই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। পলাশিপাড়া থানার পুলিশ ‘আর্থিক লেনদেন’ করে ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দিয়েছে। তাঁরা বলছেন, “এ ক্ষেত্রেও পুলিশ যাতে তা না-করতে পারে সে জন্য পথে নেমেছি।”
ওই ঘটনায় পুলিশ ওলিউল্লা মল্লিক নামে এক জনকে গ্রেফতার করেছিল। এ দিন উত্তেজিত জনতা তার বাড়িতে হামলা চালান। বাড়ি ভাঙচুরের পরে আগুন ধরিয়ে দেন। খবর পেয়ে দমকলের দুটো ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু উত্তেজিত জনতা আগুন নেভাতে বাধা দেন। পরে অবশ্য আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে দমকল বাহিনী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ ঘণ্টা অবরোধ চলার পর ঘটনাস্থলে তেহট্ট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত হন। তাঁর সামনেই পলাশিপাড়া থানার পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন বিক্ষোভকারীরা। পরে তিনি বিক্ষোভকারীদের তাঁদের অভিযোগের যথাযথ পদক্ষেপ করার প্রতিশ্রুতি দিলে বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, “গোটা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি। যদি কারও গাফিলতি ধরা পড়ে তা হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”