পিকনিকের দিন। নিজস্ব চিত্র।
বছরের শেষ সপ্তাহান্ত। তার উপরে বড়দিন। শুক্রবার থেকেই ছুটি পড়ে গেল অনেক সরকারি বেসরকারি দফতরে। তাতেই শহর যেন ফিরল উৎসবের পথে। শীতের বিকেল নামল আলোর রোশনাই জ্বেলে। গ্রামে গঞ্জেও উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ল। তবে সবই হল খুবই সারল্যের সঙ্গে। কোথাও বাড়তি কোনও জাঁকজমক নেই। পিকনিকের আসরেও নেই পরিচিত ডিজের চমক। তবে সন্ধে গড়াতে শহরের রাস্তায় বেশ ভিড় হয়।
অতিমারির কারণে বহরমপুরে নিশ্চুপেই কাটল জিশু খ্রিস্টের জন্মদিন। খ্রিস্টের উপাসকেরা গির্জায় এলেন প্রার্থনা সভায়, ওই পর্যন্তই। শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন নিজেদের মধ্যে। গির্জায় পড়া হল বাইবেলের বাছাই অংশটুকু। আজ সকাল আটটা থেকে উপাসনা গৃহে প্রার্থনা সভায় যোগ দেবেন তাঁরা। তবে সবটাই হবে করোনা বিধি মেনে জানান বহরমপুর ক্যাথোলিক চার্চের গির্জার ফাদার।
অতিমারির কারণে এবার গির্জার উপাসনা গৃহে প্রবেশ নিষেধ বহিরাগতদের। বহরমপুরের বাসিন্দা সৌমেন মণ্ডল বলেন, “অতিমারি এবছর পুজোতেও আনন্দ করতে দেয় নি। তেমনি বড়দিনের আনন্দও মাটি করে দিল।”
তবু শহরবাসী ঘরবন্দি ছিলেন না ওইদিন সন্ধ্যায়। ঠেলাঠেলির ভিড় না থাকলেও সাজানো গির্জা চত্বর দেখতে ভিড় করেছিলেন অনেকেই। অন্য বছরের মতো এবার বড়দিনে মেলা বসেনি ওয়াই এম এ মাঠের চারপাশে। এক উপাসক জন তিরকা মুর্মু বলেন, “বহরমপুরের বাইরের মানুষও ভিড় করেন এই গির্জায় বড়দিনে। এবছর তাঁরা আসেননি।”
এ দিন অবশ্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সেভ লাইফ সেফ ড্রাইভের প্রচারে সান্তাকে দেখা গিয়েছে রাস্তায়। তৃণমূল ছাত্রপরিষদের পক্ষ থেকে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরেছে ‘সান্তা’।
উত্তরে হাওয়া সরে যেতেই ঠাণ্ডা কম ছিল বড়দিনে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৮ ডিগ্রি। রোদ ঝলমল বড়দিনে জেলার বিভিন্ন পিকনিক স্পটে ভিড় জমিয়েছিলেন মানুষজন। তবে শুক্রবার হওয়ায় লালবাগের হাজারদুয়ারি বন্ধ থাকলেও কাটরা মসজিদ, মতিঝিল, খোসবাগ সহ লালবাগের একাধিক ঐতিহাসিক স্থানে ভিড় করে বড়দিন উদযাপন করেছেন বহু মানুষ।
চলতি বছর করোনার কারণে বেশিরভাগ মানুষজন যারা লালবাগ বেড়াতে এসেছেন তাদের বেশিরভাগই মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ার বলে দাবি হোটেল মালিকদের। বহরমপুর শহরের হোটেলগুলিতে ভিড় তেমন ছিল না। এক হোটেল ব্যবসায়ী উৎপল সরকার বলেন, “অন্য বছরগুলো এই সময় ভর্তি হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর এখনও বেশ কিছু ঘর খালি আছে।”
ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় ঐতিহাসিক শহর মুর্শিদাবাদ ভ্রমণে পর্যটকের আগ্রহ বেড়েছে ঠিকই তবে তা অন্য বছরের মত দুই বা তিন রাতের জন্য থাকার কথা ভাবছেন না কেউ বলেই দাবি স্থানীয় হোটেল মালিকদের।
তবে লালবাগের হাজারদুয়ারি সংলগ্ন এলাকার হোটেলগুলিতে কিছুটা ভিড় হয়েছে বড়দিনে। এই হোটেলগুলিতে সাধারণত এক দিন বা বড়জোর দেড় দিনের জন্য মানুষজন বুক করেছেন বলে জানান তাঁরা। লালবাগের এক হোটেল মালিক পরিতোষ দাস বলেন, “সপ্তাহ খানেক আগেও এই ভিড় ছিল না। তবে আজ বড়দিনের জন্য হোটেল ভর্তি ছিল।” তাই ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফোটে।
লালবাগ সিটি মুর্শিদাবাদ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “শুক্রবার হাজারদুয়ারি বন্ধ থাকায় এ বছর ভিড় তেমন হয়নি বললেই চলে। ট্রেন যাত্রীরা হাজারদুয়ারি সংলগ্ন হোটেলগুলিতে কিছুটা ভিড় হলেও তুলনামূলক ভাবে পর্যটক কম এসেছেন।”