চন্দ্রনাথ সাহা ও ভবতোষ দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র
চায়ের দোকানেও এখন রমরমিয়ে চলছে ডিজিটাল লেনদেন। স্মার্টফোনের কল্যাণে ঢুকে পড়েছে পেটিএম, গুগল পে। আর এর জেরেই দিন গিয়েছে চন্দ্রনাথ সাহা, ভবতোষ দেবনাথদের। যাঁদের পেশা ছেঁড়া নোট বদলে দেওয়া।
জানা গেল, আটাত্তরের চন্দ্রনাথ প্রায় ২০ বছর ধরে ছেঁড়া-ফাটা টাকা পাল্টানোর কাজ করছেন। বাড়ি নবদ্বীপ। বছর দুই হল চুয়াত্তরের ভবতোষ সঙ্গী হয়েছেন চন্দ্রনাথের। সপ্তাহের এক-এক দিন এক-এক এলাকায় যান। বিভিন্ন দোকান থেকে শুরু করে এলাকার মানুষের কাছে থাকা যাবতীয় ছেঁড়া, ফাটা নোটের বিনিময়ে ওই টাকার চেয়ে সামান্য কম মূল্য দিয়ে সংগ্রহ করেন তাঁরা। হাতবদল হয়ে শেষ পর্যন্ত ওই ছেঁড়া-ফাটা নোট জমা পড়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে।
এটাই তাঁদের পেশা। কোনও দিন বর্ধমান-কাটোয়া, তো কোনও দিন রানাঘাট-কৃষ্ণনগরে আসেন তাঁরা। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসায় টান পড়েছে।
‘‘আগে বহরমপুরেও যেতাম। কিন্তু এখন আর সে বাজার নেই। ডিজিটাল লেনদেনের যুগে লোকের কাছে আর সেই রকম ছেঁড়া নোট নেই। তাই বেশি ঘুরি না।’’ বলেন চন্দ্রনাথ।
কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড়ে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে যখন কথা চলছে চন্দ্রনাথ আর ভবতোষের সঙ্গে, ঠিক তখনই মানিব্যাগ থেকে একটা ছেঁড়া দশ টাকার নোট তাঁদের দিকে এগিয়ে দেন তন্ময় সরকার। বলেন, ‘‘এটা পাল্টানো যাবে?’’ হাসিমুখে সেই নোট নিয়ে চন্দ্রনাথ আট টাকার খুচরো ফেরত দেন তাঁকে। তার পর বলেন, ‘‘আজকাল এই কিছু খুচরো দশ, বিশ টাকার নোট মেলে পাল্টানোর জন্যে। বড় নোট আর মেলেই না প্রায়।’’ সঙ্গে স্মৃতিচারণায় উঠে আসে বছর কুড়ি আগের কথা। রাস্তায় রাস্তায় গ্যাস লাইট ফেরি করতেন তিনি। সেখান থেকে পুরনো টাকা বদলানোর ব্যবসায় আসা। তা দিয়েই সংসার চালিয়েছেন চন্দ্রনাথ। আর ভবতোষ আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘সব চেয়ে বেশি ছেঁড়া-ফাটা নোট মিলত বাজার, মাছের আড়তে। এখন সেখানেও ডিজিটাল লেনদেন ঢুকে পড়েছে। গ্রাম থেকে শহর— সব জায়গায় খুচরো বিক্রেতারাও এখন ডিজিটাল মাধ্যমে টাকা নিচ্ছেন ক্রেতাদের থেকে। যার ফলে বাজার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ছেঁড়া টাকা।’’
কৃষ্ণনগর গোয়ারি বাজারের মাছের আড়তদার জয়ব্রত হালদার বলেন, ‘‘আমাদের আড়তে টাকার ব্যবহার কমেছে তিরিশ শতাংশেরও বেশি। প্রতি দিনই বাড়ছে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা।’’ আশঙ্কা, হয়তো আগামীতে হারিয়ে যাবে কাগজের টাকা। আর তার সঙ্গে হারিয়ে যাবেন চন্দ্রনাথ, ভবতোষের মতো কারবারিরাও।