চায়ের দোকানে খদ্দের পালায়

যক্ষ্মা হয়েছে জানতে পারার পরেই আমার কাছের মানুষগুলোকে কেমন যেন চোখের সামনে পাল্টে যেতে দেখলাম। আগে পাড়ার মোড়ে যেখানে চা খেতে খেতে গল্প-আড্ডায় সময় কাটাতাম।

Advertisement

সঞ্জয় সরকার (যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী)

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭ ০০:৫৮
Share:

যক্ষ্মা হয়েছে জানতে পারার পরেই আমার কাছের মানুষগুলোকে কেমন যেন চোখের সামনে পাল্টে যেতে দেখলাম। আগে পাড়ার মোড়ে যেখানে চা খেতে খেতে গল্প-আড্ডায় সময় কাটাতাম। সেখানে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। চায়ের দোকানের কাকাও আমাকে গ্লাসে চা দিতে রাজি হয় না। কারণ আমি যে গ্লাসে চা খাব সেই গ্লাসে অন্যরা চা খেতে রাজি হবে না। সেই সঙ্গে আমি চায়ের দোকানে ওঠাবসা করলে খদ্দের কমে যাওয়ার আশঙ্কাও ছিল মালিকের। এমনকী আত্মীয়স্বজন থেকে পাড়া-প্রতিবেশীরাও আমার বাড়ি আসা-যাওয়া আগের থেকে অনেকটাই কমিয়ে দেয়। যদিও বাড়িতে আমি খাবার খাই একটি নির্দিষ্ট থালায়। জলও খাই নির্দিষ্ট গ্লাসে। এটা আমি সচেতনতার জায়গা থেকেই নিজেকে আলাদা করে নিয়েছিলাম। একই কারণে বাড়িতেও আমি নির্দিষ্ট একটি ঘরে কাটাই। আসলে সব কিছু দেখেশুনে আমি নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হই। সবচেয়ে খারাপ লাগে মোবাইল-কম্পিউটারের যুগে যক্ষ্মা-কলেরা রোগ সম্বন্ধে সাধারণ মানুষ কত ভুল ধারণা নিয়ে বাস করছে। কোথাও অচ্ছুৎ করে রাখার যে প্রবণতা সাধারণ মানুষদের এটাই সবচেয়ে যন্ত্রণার। ফলে এক দিকে শারীরিক কষ্ট যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে মানসিক কষ্ট ও দুঃখ। কিন্তু যক্ষ্মা কোনও ছোঁয়াচে রোগ নয় এবং নিয়মিত ওষুধ খেলে যে ওই রোগ সেরে যায়—তা নিয়ে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর ফ্লেক্স-ব্যানারের পাশাপাশি বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করলেও মানুষ বুঝছে কোথায়? যক্ষ্মা রোগ হয়েছে মানেই সেই রোগীর কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা বা দূরত্ব তৈরি করে রাখার মধ্যে অশিক্ষা ও কুসংস্কার রয়েছে বলেই আমি মনে করি। যক্ষ্মা রোগ ও রোগীদের সম্বন্ধে মানুষের ভুল ধারণা না পাল্টালে তা হবে যন্ত্রণার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement