কুপনের-জন্য: নথি সংশোধনের জন্য বিরাট লাইন পড়ল হরিহরপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
বহরমপুর আগেই দেখেছে, শীতের রাতে ছেঁড়া কম্বল জড়িয়ে ধুলো-রাস্তায় এমন নিঝুম লাইন দেখেছে হরিহরপাড়াও। আধার কার্ড সংশোধনের জন্য পোস্ট অফিসের সামনে কুপন সংগ্রহের জন্য সেই দীর্ঘ লাইন এ বার ফিরে এল নওদায়।
ঘুসঘুসে কাশি নিয়ে সত্তর বছরের বৃদ্ধ থেকে কাঁথা জড়ানো কোলের ছেলেকে নিয়ে মা— সেই চেনা ছবি, চেনা উদ্বেগ। তাঁদের কেউ বলছেন, ‘‘সংশোধন না না-করালে তো শুনছি ঘর ছাড়তে হবে!’’ কেউ বা আতঙ্কে চোখের জল সামাল দিতে না পেরে বলছেন, ‘‘নিজের নামে বানানের ভুল ঠিক করতে এমন রাত জাগতে হবে কোনও দিন ভেবেছিলাম!’’
আধারের ভয়ে আঁধারেও তাই ভিড় করে আছেন গ্রামীণ মানুষ। নওদা পোস্ট অফিসের সামনে আঁকা বাঁকা লাইনটা সাপের মতো ছড়িয়ে আছে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। দু’দিন ধরে অপেক্ষা। নওদা পোস্ট অফিসের সামনে লাইনটা ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে শুক্রবার রাত থেকে। গ্রামবাসীদের দাবি, মানুষের হয়রানি কমাতে প্রতিটি ব্লকে চালু হোক আধার সংশোধনের কেন্দ্র।
নওদার আমতলা উপ-ডাকঘরের সামনে দাঁড়িয়ে দেখা গেল প্রায় হাজার কয়েক মানুষের লাইন। কুপন দেওয়া হবে দু'শ জনকে। কুপন পেয়ে দু’শো জন ফিরে গেলেও বাকিরা ভাঙা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেই হা-হুতাশ জুড়ে দেন। মধুপুরের বাসিন্দা রুনা লায়লা বিবি শুক্রবার সকাল থেকেই পোস্ট অফিসের সামনে আধার সংশোধনের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফিরে যাওয়ার আগে রুনা বলছেন, ‘‘দেশ ছাড়ার আতঙ্কে রয়েছি। তাই কুপন পাব না জেনেও দাঁড়িয়ে ছিলাম। যদি কিছু করে পেয়ে যাই!’’
উপ-ডাকঘরের পোস্টমাস্টার সঞ্জয় পাল বলেন, ‘‘১৫ ফেব্রুয়ারি ফের দু'শ জনকে কুপন দেওয়া হবে। জানি, অনেকেই ফিরে গেছেন। খারাপ লাগছে। কিন্তু আমাদেরও তো হাত পা বাঁধা!’’