কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির প্রতিবাদে একদিনের ধর্মঘট ডেকেছে চালকরা। বাসের মধ্যে মশারি টাঙিয়ে চলছে গালগল্প। বহরমপুর বাসস্ট্যান্ডে তোলা ছবি। ৫ জানুয়ারি, ২০২৪। ছবি গৌতম প্রামাণিক
দণ্ড সংহিতার ‘হিট অ্যান্ড রানে’র প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মবিরতি করলেন মুর্শিদাবাদের বাস শ্রমিকেরা। যার জেরে শুক্রবার ভোর থেকেই পথে নামেনি বেসরকারি বাস। এমনকি বহরমপুর থেকে অধিকাংশ ট্রেকার বেরোয়নি। পথে শুধু হাতে গোনা সরকারি বাস ছিল। যার জেরে ভোগান্তি পোহালেন মুর্শিদাবাদের বাসিন্দারা। বাস চলাচল বন্ধ থাকার সুযোগ অটো-টোটো সহ নানা ছোট যানবাহনে করে যাত্রীরা যাতয়াত করেছেন। আর মওকা বুঝে সে সব গাড়ির চালকেরা স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি ভাড়া হাকিয়েছেন। তবে কাজের দিনে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় অনেকেই বিপাকে পড়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছন।
শুক্রবার ভোরে ফরাক্কা থেকে সরকারি বাসে করে কান্দির উদ্দেশে রওনা দেন সস্ত্রীক মঙ্গল সরেন। বহরমপুর থেকে নেমে বাস পাল্টে তাঁদের কান্দি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বহরমপুরে এসে জানতে পারেন বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ। শেষ পর্যন্ত ভিড়ে ঠাসা সরকারি বাস ধরে তাঁরা কান্দি রওনা দেন। বহরমপুরের শেফালি মণ্ডল হরিহরপাড়া যাওয়ার জন্য বাস ধরতে মোহনা বাসটার্মিনাসে এসে জানতে পারেন বাস চলাচল বন্ধ। ট্রেকার স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখেন ট্রেকারও চলছে না। যার জেরে তাঁকে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
ডোমকলের সাদেক হোসেন কলকাতা থেকে ট্রেনে করে এসে বহরমপুরে নামেন। কিন্তু বাস না পেয়ে বিপাকে পড়েন। শেষে ছোট গাড়িতে বেশি ভাড়া দিয়ে ডোমকল রওনা দেন। তবে ডোমকল রওনা দেওয়ার আগে সাদেক বলেন, ‘‘বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছি ঠিকই। তবে বাস টার্মিনাসে কথা বলে জানলাম ওদের দাবি নায্য। তাই সাধারণ মানুষকেও ভোগান্তি সহ্য করতে হচ্ছে।’’
নিত্যযাত্রীরা অবশ্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, দাবি ন্যায্য হোক বা না হোক, সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে কখনওই এমন কর্মবিরতি করা উচিত হয়নি।
‘মুর্শিদাবাদ জেলা মোটর শ্রমিক সমন্বয় কমিটি’ এই কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। ওই সংগঠনের সহ-সম্পাদক আনিসুল আম্বিয়া বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে প্রায় ৬০০টি বেসরকারি বাস চলাচল করে। এ ছাড়া পড়শি জেলা মালদহ, বীরভূম, বর্ধমান এবং নদিয়া থেকেও ২৫০-৩০০টি বাস মুর্শিদাবাদ জেলায় যাতায়াত করে। এ দিন সে সব বাস পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। শুধু তাই নয় দু’ একটি বাদে অধিকাংশ ট্রেকার চলাচল বন্ধ রয়েছে।’’
তাঁর দাবি, ‘‘মানুষ যাতে ভোগান্তির মধ্যে না পড়েন সে জন্যই আগে থেকে ঘোষণা করেই আমরা এই কর্মবিরতিতে গিয়েছি। যে ভাবে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন পরিবহণ আইন আনছে তা শ্রমিকদের পক্ষে বিপদজনক। তাই আমরা ওই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মবিরতি যেতে বাধ্য হয়েছি।’’ এক বাস চালক জানান, বাস চালকদের কাছে যদি ১০ লক্ষ টাকা থাকত তাহলে বাস চালাতেন না। তাই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে এই আন্দোলন।