নিরুপায় মৎস্যজীবীরা নামছেন শাখা পদ্মায় (ডান দিকে)। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
দেখে কে বলবে এটা ইলিশের মরসুম! সুনসান পদ্মা, ভারত-বাংলাদেশের দু’পাড়েই নৌকার দেখা নেই। নেই ধীবরদের হাঁকডাকও। বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর থেকেই জলঙ্গির কাকমারি চর, শিরচর এলাকার পদ্মার চেনা চেহারাটাই বিলকুল বদলে গিয়েছে।
পদ্মার ঢেউ লাগছে ঘাটে বাঁধা নৌকায়। সেই ঢেউয়ে নৌকার সঙ্গে সঙ্গেই যেন দুলছে ধীবরদের ভবিষ্যৎও। কাকমারি বিএসএফ ক্যাম্পের মূল ফটকে অন্য দিন সীমান্তরক্ষীদের ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে। মৎস্যজীবীদের ভোটার কার্ড পরীক্ষা করা, জমা নেওয়ার মতো বিস্তর কাজ থাকে। গত ক’দিন থেকে সেই ব্যস্ততাও উধাও। কারণ, পদ্মায় গুলিকাণ্ডের পর থেকে মৎস্যজীবীরা মূল পদ্মায় নামতে পারছেন না।
কিন্তু মাছ ধরেই যাঁদের উনুনে হাঁড়ি চড়ে তাঁরা আর কত দিন বসে থাকবেন! ফলে কাকমারি চর, শিরচরের ধীবরেরা পদ্মার অন্য শাখায় জাল নিয়ে ডিঙি ভাসাচ্ছেন। মৎস্যজীবী সুকান্ত মণ্ডল বলছেন, ‘‘কী আর করি বলুন তো! এখানে তো ইলিশ জুটবে না। তবুও যদি কেজি খানেক ছোট মাছও জোটে তা হলেও চাল-ডালটা কিনতে পারব।’’ তবে সুকান্তেরা শাখা নদীর জলে নামলেও কাকমারি চর, শিরচর এলাকার অনেক মৎস্যজীবী এখন কাজ হারিয়ে ঘরে বসে আছেন। এমনকি বৃহস্পতিবার প্রণব মণ্ডলের সঙ্গে যে দু’জন ধীবর ছিলেন সেই অচিন্ত্য মণ্ডল ও বিকাশ মণ্ডল ঘরে ফিরলেও কাজে ফিরতে পারেননি।
নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অচিন্ত্যের দাবি, ‘‘সে দিনের ঘটনার পর থেকে কী করব সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না। একে পদ্মায় নামা এখন নিষেধ। তা ছাড়া নামতে দিলেও আর আগের মতো নিরাপদে, নিশ্চিন্তে মাছ ধরতে পারব কি না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।’’
পাশে দাঁড়িয়ে মৎস্যজীবী সুকোমল মণ্ডল বলছেন, ‘‘এই ঘটনার পরে ভিন্্রাজ্যে অন্য কাজে যাওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা আমাদের সামনে খোলা নেই। এ ভাবে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরা অসম্ভব।’’ আর মৎস্যজীবী বিকাশ মণ্ডল বলছেন, ‘‘শরীর, মনের উপর দিয়ে বড্ড ধকল গিয়েছে। দয়া করে আমার কাছে কিছু জানতে চাইবেন না।’’