ঘুম কেড়েছে ভাঙন। নিজস্ব চিত্র
পুজোর আগেই দুয়ারে হাজির ভাঙন। একের পর এক ঘর ধসে পড়ছে গঙ্গায়। ভরা গাঙে এই মুহূর্তে যে ভাঙন রোধ সম্ভব নয় তা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। ফরাক্কার হোসেনপুর ঘিরে তাই আশঙ্কার গুমোট মেঘ।
ফরাক্কা ব্যারাজের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার রাজেশকুমার সিং বলছেন, ‘‘হোসেনপুরে ভাঙনের যা পরিস্থিতি তাতে এই মুহূর্তে ভাঙন রোধের কাজ করা মানে অর্থের অপচয়। জল কমলে কিছু কাজ করা সম্ভব, এখন নয়।”
গত বছর হোসেনপুরে ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছিল ৯১টি পরিবারের ঘর। এ বারে দেড় মাসে ঘর থেকে জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে বাড়ি ভেঙে নদীর পাড় থেকে সরে গিয়েছে অন্তত ৪৫টি পরিবার। গ্রামের স্কুলে আড়াইশো ছাত্রছাত্রীর মধ্যে উপস্থিত থাকছে হাতো গোনা কয়েক জন। নদী থেকে ১০০ মিটার দূরে সে স্কুলও যে কত দিন থাকবে তা নিয়ে সন্দিহান পড়ুয়া-শিক্ষক সকলেই।
নদীতে ঘর হারিয়ে কেউ আশ্রয় নিয়েছেন ফ্লাড শেল্টারে, কেউ আবার গাছতলা কিংবা খোলা আকাশের নীচেই সংসার পেতেছেন। অভিযোগ, এত কিছুর পরেও হুঁশ নেই প্রশাসনের। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াননি ফরাক্কার সরকারি প্রশাসনের কোনও কর্তা। জোটেনি ত্রাণও।
সম্প্রতি ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে হোসেনপুরে গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তৃণমূলের লোকজন। খোদ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের আঞ্জুমারা খাতুন বলছেন, “দেড় মাস ধরে ভাঙন চলছে। ৪৫টিরও বেশি বাড়ি নদীতে ধসে গিয়েছে। অথচ খাবার তো দূরের কথা, ত্রিপল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারেনি ব্লক প্রশাসন।” পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের মালতি মণ্ডল ঘোষ বলছেন, “ওই ভাঙন এলাকা থেকে ঘুরে এসে বিডিওকে বার বার বলেছি খাবার ও ত্রিপল পাঠাতে। কিন্তু রবিবার বিকেল পর্যন্ত কোনও সরকারি ত্রাণ জোটেনি। গত বছর ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে ৯১টি পরিবার গ্রামেই অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে চাটাইয়ের ঘর তৈরি করে আছেন। পুনর্বাসনের তালিকা নবান্নে পাঠিয়ে কোনও ফল হয়নি। এ বছর এ পর্যন্ত ভাঙনে ঘর হারিয়েছে আরও ৪৫টি পরিবার। গ্রামে ক্ষোভ থাকাটা তাই স্বাভাবিক।”
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি এজারত আলিও ব্লক প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ করে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রাণ পাঠানোর দাবি জানিয়ে বিডিওকে চিঠি দিয়েছেন। এজারত বলছেন, “আমরা শাসক দল বলে পথে নামতে পারছি না। আমরা ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি পালন করে সমস্যার সমাধান করতে চাইছি। অথচ ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের না পারছি খাবার দিতে, না পারছি ওঁদের আশ্রয় দিতে। ভাঙন বেড়েই চলেছে। অথচ প্রশাসনের দেখা নেই।”
ফরাক্কার বিডিও রাজর্ষি চক্রবর্তী অবশ্য বলছেন, “সোমবারেই হোসেনপুরে শুকনো খাবার ও ত্রিপল পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা অনেক। তাদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে তাই চূড়ান্ত কিছু ব্যবস্থা এখনও করা যায়নি। তবে সে ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তা চলছে।’’ তা হলে এত দিন কিছু করা হয়নি কেন? সে প্রশ্নের অবশ্য সদুত্তর মেলেনি।