প্রতীকী ছবি
ভুলের গেরো যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। সংশোধনের পরেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, আগের ভুলটা ঠিক হয়েছে ঠিকই। কিন্তু নতুন করে ফের আরও একটি ভুল হয়েছে। এখন সেই ভুল সংশোধনের জন্য ফের হয়রান হতে হচ্ছে।
এনআরসি ও নয়া নাগরিকত্ব আইনের আতঙ্কে ঘুম উড়েছে জেলার বহু মানুষের। দিনরাত এক করে কেউ আধার কার্ড তৈরি করাতে ছুটছেন। কেউ ছুটছেন আধার কার্ডের ভুল সংশোধন করতে। এখন হাতেগোনা কয়েকটি ডাকঘর ও ব্যাঙ্কে আধারের কাজ চলছে। ফলে সেখানে উপচে পড়ছে ভিড়। সেই ভিড় ঠেলে তড়িঘড়ি কাজ সারতে অনেকেই আগের রাত থেকে লাইন দিচ্ছেন ডাকঘরের সামনে।
এ দিকে, নতুন করে শুরু হওয়া ভোটার কার্ড সংশোধনের জন্য দিনক্ষণ ঘোষণা হতেই জেলার ব্লক অফিসগুলোতেও ভিড় উপচে পড়েছে। ভিড় এড়াতে অনলাইনে ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য ইন্টারনেট ধাবাগুলোতেও মানুষ লাইন দিচ্ছেন। শুধুমাত্র নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য প্রমাণপত্র জোগাড় করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন লোকজন। সোম থেকে শুক্র সরকারি দফতরগুলোতে, শনি ও রবিবার ভোটার কার্ড সংশোধনের জন্য বিশেষ শিবিরগুলোতেও বহু মানুষ তথ্য যাচাই করতে আসছেন। এ ছবি এর আগে যখন ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছিল তখনও দেখা গিয়েছিল।
এর পরে যখন তাঁরা হাতে নতুন ভোটার কার্ড পাচ্ছেন তখন তাঁদের মাথায় হাত। কেউ দেখছেন নতুন করে বানান ভুল হয়েছে, কেউ দেখছেন আগে যা ছিল তাই আছে, কোনও পরিবর্তন হয়নি। কারও ইংরেজি বানান ঠিক আছে তো বাংলা বানান ভুল হয়েছে। এক তথ্য সংশোধন করতে গিয়ে গিয়ে আর এক ভুল তথ্য হাজির হচ্ছে। আবার তা সংশোধনের জন্য হত্যে দিতে হচ্ছে ব্লক অফিসগুলোতে। এই সমস্যা অনলাইন, অফলাইন দুটোতেই হচ্ছে। অফলাইনের এই ধরনের ভুলের জন্য ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের গাফিলতির দিকেই আঙুল তুলছেন ভোটাররা। মুর্শিদাবাদ নির্বাচন দফতরের আধিকারিক ম্যাঘপোন ডি লামা বলেন, ‘‘এত ডেটা এন্ট্রির ক্ষেত্রে এক-দু’শতাংশ ভুল হতেই পারে।’’
গোরাবাজারের বাসিন্দা বিপ্লব মণ্ডলের ইংরেজি নাম ঠিক থাকলেও বাংলা বানান ভুল হয়েছে। তিনি জেলা নির্বাচনী দফতরে যোগাযোগ করলে তাঁকে বলা হয়েছে, নতুন করে ফের সংশোধনের জন্য নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করতে হবে। লামা বলছেন, ‘‘এই ভুলটা সফ্টওয়্যারের দোষেই হচ্ছে। ইংরেজিতে নাম টাইপ করার সঙ্গে সঙ্গে সেটা বাংলায় পরিবর্তন হয়ে যায়। অনেক অক্ষর সবসময় বাংলা মূল অক্ষরে পরিবর্তন হয় না। ফলে যিনি ফর্ম পূরণ করছেন তিনি দেখেও তা ঠিক করতে পারছেন না। আর সেটাই প্রিন্ট হয়ে চলে আসছে।’’
বহরমপুরের বাসিন্দা সঞ্জীব রায় নিজে হাতে অনলাইনে ভোটার কার্ডে মায়ের নাম সংশোধন করেছিলেন। সেই তথ্য যাচাই করতে বাড়িতেও এসেছিলেন ওই এলাকার বিএলও। তার জন্য যে যে প্রামাণ্য বিষয়গুলো জমা দেওয়া দরকার তা-ও বিএলওকে জমা দিয়েছেলেন সঞ্জীব। অথচ সংশোধিত ভোটার তালিকা দেখতে গিয়ে নজরে পড়ে তাঁর মায়ের নাম আগেও যা ছিল, এখনও তাই আছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন সেপ্টেম্বরে ফর্ম পূরণ করে জমা দিলেও এখনও তা অনুমোদন হয়নি। যদিও ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘ওঁরা দেরি করে ফর্ম পূরণ করেছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর থেকে যে সংশোধনী শুরু হয়েছে, সেই তালিকার সঙ্গে ওগুলোও সংশোধিত হয়ে যাবে।’’