ধনতেরাস উপলক্ষে সোনার দোকানে ভিড়। শুক্রবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
অপয়া সংখ্যা হিসাবেই পরিচিত ১৩। অথচ বছরে এই একটি দিনই নাকি সৌভাগ্যের প্রতীক হয়ে ওঠে। গোটা দেশজুড়ে সেদিনটাই নাকি ধনতেরস!
কালীপুজোর আগের ত্রয়োদশী তিথিকে হিন্দি বলয়ে ধনতেরস-দিবস হিসাবে পালন করার রীতি বহুদিনের। প্রচলিত বিশ্বাস, এদিন সোনা-রুপোর মতো মূল্যবান ধাতু কিনলে লক্ষ্মী নাকি গৃহে অচঞ্চল থাকেন। সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। শুধু সোনা রা রুপো বলে নয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধনতেরসে অন্যান্য ধাতুর তৈজসপত্র এমনকি ঝাঁটা-ঝাড়ন কেনার চলও আছে। বেশ কয়েক বছর হল ভিন্ রাজ্যের ধনতেরস কেনাকাটার পার্বণ হিসাবে এরাজ্যেও পাকাপোক্ত জায়গা করে নিয়েছে। কেননা ওই তিথিতে কেনাকাটা করে সংসারের শ্রীবৃদ্ধির সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ বাঙালিরা। ফলে শুক্রবার দিনভর তুমুল কেনাকাটা চলল সোনার দোকানে। পুজোর সময় সোনার দর প্রায় ৬০ হাজার টাকা ছুঁয়ে ফেলেছিল। উৎসবের মরসুম হলেও ওই দামে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে বাজার। ধনতেরসের মুখে তাই সংশয়ে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্ত ফের সোনার দাম নেমেছে হাজার দুয়েক টাকা। শুক্রবার ২২ ক্যারাট হলমার্ক সোনার প্রতি ১০ গ্রামের দাম ছিল ৫৭ হাজার ৮৫০ টাকা।। দাম কমতেই ধনতেরসে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসেছেন ক্রেতারা। ছোটবড় সোনার দোকানের মালিক থেকে বড় সংস্থার শো-রুম সকলেই একবাক্যে বলছেন কেনাকাটা ভালই হচ্ছে।
স্বর্ণব্যবসায়ী সুজিত কুমার দে বলেন, “এক, দুই, পাঁচ থেকে দশ গ্রামের সোনা ও রুপোর কয়েনের পাশাপাশি কানের দুল, লকেট, মঙ্গলসূত্র, ছেলেদের হাতের রিষ্টলেট, আংটি এমনকি সোনার টিপ পর্যন্ত রয়েছে ধনতেরসের কেনাবেচার তালিকায়।” নবদ্বীপের স্বর্ণ-রৌপ্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোপাল চাঁদমল্লিক বলেন, “এমন অনেক ক্রেতা আছেন যাঁরা ছেলে বা মেয়ের বিয়ের অর্ডারি বিয়ের গয়না এই দিনই ডেলিভারি নিতে চান। অন্যদিকে দামটাও কমে যাওয়ায় লোকে মোটামুটি ভালই কেনাকাটা করছেন। তবে হালকা গয়নার দিকেই ঝোঁক বেশি।” স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দাবি, ধনতেরস উপলক্ষে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত মজুরিতে ছাড় দেওয়া হয়। তারও একটা আকর্ষণ আছে ক্রেতাদের কাছে।
তবে শুধু হলুদ ধাতুই নয়। এ দিন বিপুল কেনাবেচা হয়েছে বাসনপত্রের দোকানেও। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন কাঁসা-পিতলের বাসন থেকে লক্ষ্মী, নারায়ণ এবং গণেশের মূর্তি বিক্রি হয়েছে। তুলনায় ঝোঁক কম ঝাঁটা কেনার দিকে। তবে ধনতেরসে ঝাঁটা কেনার পিছনে প্রচলিত যে বিশ্বাস তা হল, এদিন অনেকেই লক্ষ্মীকে আবাহনের কারণে অলক্ষ্মী বিদায়ে ঝাঁটা কিনে থাকেন।