প্রতীকী ছবি।
সবুজ দরজায় লেপ্টানো সাদা কাগজে এক চিলতে নোটিস— মেশিন খারাপ, বন্ধ ডায়ালিসিস।
শুক্রবার সকাল থেকে, সেই নোটিসের সামনেই উপুড় হয়ে পড়েছে চুয়ান্নটা ন্যূব্জ রোগী আর তাঁদের পরিবারের উদ্বিগ্ন মুখ। তা হলে?
প্রশ্ন করলে পাল্টা উত্তর ফিরছে, ‘‘লেখাই তো আছে, মেশিন তো আর আমি সারাব না!’’
অতএব হুইলচেয়ার, মেঝে, কিংবা বহু কষ্টে জোগাড় করা অ্যাম্বুল্যান্সে দূর গ্রাম থেকে আসা রোগীদের মুখ ফ্যকাসে। কপালে ভাঁজ বাড়ির লোকের।
বৃহস্পতিবার রাত থেকেই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের ডায়ালিসিস মেশিন ‘দেহ’ রেখেছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনে ৫৪ জনের ডায়ালিসিস করানো হয়। তিন থেকে ছ’মাস পরে ডেট পেয়ে কেউ কান্দি কেউ বা আরও দূরের সীমান্ত ছোঁয়া গ্রাম থেকে এসেছিলেন ডায়ালিসিস করাতে। ফিরে গিয়েছেন গভীর দুশ্চিন্তা নিয়ে।
অথচ সরকারি হাসপাতালে এই পরিষেবা না ফেলে বেসরকারি হাসপাতালে তা করাতে গেলে খরচের বহর শুনে মাথায় হাত পড়েছে অনেকের। করণীয় কি?
জেলাশাসক, তথা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল রুগি কল্যাণ সমিতির সভাপতি ওয়াই রত্মাকর রাওয়ের কাছে তার কোনও সদুত্তোর মেলেনি। তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাত থেকে ডায়ালেসিস যন্ত্র বিকল হয়ে গিয়েছে। কলকাতা থেকে ইঞ্জিনিয়র এসে মেরামতি করছেন। আশা করা যাচ্ছে সন্ধ্যা থেকে ফের ডায়ালেসিস শুরু করা যাবে।’’ কিন্তু ততক্ষণে ফিরে গিয়েছেন রোগীরা।
তবে, ডায়ালিসিস ইউনিটের কর্মীরা জানান, শনিবারের আগে তা সেরে উঠবে, এমন ভরসা নেই।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, জলের পাইপলাইন ও বিদ্যুতের লাইনের বিভ্রাটের ফলে প্রায়ই ডায়ালিসিসের যন্ত্র বিকল হয়ে যায়। হাসপাতল সূত্রে খবর, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই এই বিপত্তি। সে দিকে হাসপাতালের নজর নেই কেন?
হাসপাতালের সুপারকে ফোন করেও সাড়া মেলেনি। এসএমএসের জবাবও দেননি তিনি।
এমন ঘন ঘন বিকল মেশিন কি সতঅয়িই জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। নাকি, এই বিপত্তি ‘ইচ্ছআকৃত? প্রশ্ন তুলছেন রোগীর পরিজনেরা।
রোগীদের একাংশের অভিযোগ, ‘‘সরকারি হাসপাতালের বিনা পয়সার পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করে হাসপাতালের বাইরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডায়ালেসিসের রোগি টেনে নিয়ে যেতেই এ ভাবে ঘনঘন যন্ত্র খারাপ হচ্ছে।’’
হাসপাতালের কর্তারা অবশ্য সে কথা মানতে চাননি। ভাণ্ডারদহের প্রদীপ মিস্ত্রি বাস চালাতেন। গত কয়েক মাস ধরে নিয়মিত ডায়ালিসিস করাতে হয় তাঁকে।
নিপাট বেকার প্রদীপ বলছেন, ‘‘বার বার যে ভান্ডারদহ থেকে আসব সে ক্ষমতাও নেই। অথচ না করালে বাঁচব না, ডাক্তার এমনই বলেছেন।’’
সে কথা শুনছে কে?