Panchayat Election

পঞ্চায়েতের মুখে অস্বস্তিতে তৃণমূল

সুব্রত সাহা দেড় বছর আগে শেষ বার বিধানসভা আসনটি দখল করেছিলেন প্রায় ৫১ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে।

Advertisement

বিমান হাজরা

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৩ ০৯:৩১
Share:

ভোটের ফল প্রকাশের পরে সাগরদিঘিতে তৃণমূলের দফতর।

সাগরদিঘিতে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে অস্বস্তি বাড়াল শাসক দল তৃণমূলের। বিধানসভার উপনির্বাচনে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস ২২ হাজার ৯৮৬ ভোটের ব্যবধানে তৃণমূলের দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে তৃণমূলের দখলে থাকা সাগরদিঘির বিধানসভা ছিনিয়ে নিলেন। দেবাশিস মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মীয়। ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতিও তিনি। এ দিন তিনি গণনাকেন্দ্রেই আসেননি।

Advertisement

২০১১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তিন বার সাগরদিঘি আসন ধরে রেখেছিল তৃণমূল। সুব্রত সাহা দেড় বছর আগে শেষ বার বিধানসভা আসনটি দখল করেছিলেন প্রায় ৫১ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে। বিজেপি ২৪ শতাংশ ভোট পেয়ে ছিল দ্বিতীয় স্থানে। এ বারে বিজেপি প্রার্থী দিলীপ সাহা মাত্র ১৩.৯৪ শতাংশ ভোট পেয়ে নেমে গিয়েছেন তৃতীয় স্থানে। সুব্রতবাবুর প্রয়াণের ফলেই সাগরদিঘির এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২৭ ফেব্রুয়ারি।

বৃহস্পতিবার সকালে সাগরদিঘি মহাবিদ্যালয়ে ভোট গণনা শুরু হতেই পোস্টাল ব্যালটের গণনা থেকে এগিয়ে থাকেন কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস। ১৬ রাউন্ডের গণনায় একটি বারের জন্যও কখনও পিছিয়ে পড়েননি বাইরন। ছ-সাত রাউন্ডের গণনা শেষ হতেই স্পষ্ট হয়ে যায় বাইরনের জয়। এরপরই গণনা কেন্দ্রের বাইরে শয়ে শয়ে কংগ্রেস সমর্থক ও কর্মীরা জড়ো হয়ে আবির খেলা শুরু করে দেন।

Advertisement

এই উপনির্বাচনে জয়ের ফলে বিধানসভায় শূন্য হয়ে যাওয়া কংগ্রেস খাতা খুলল তাই নয়, তৃণমূলের দখলে থাকা সাগরদিঘি আসন ছিনিয়ে নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিরোধী জোটের এক নতুন বার্তা দিল বলা চলে। জোট আন্তরিক হলে যে তৃণমূল ও বিজেপিকে এ রাজ্যে হারানো সম্ভব সাগরদিঘি বিধানসভার জয়কে সামনে রেখে ফের এদিন সাগরদিঘিতে এসে এ কথায় স্পষ্ট করে দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

গত দু’সপ্তাহ ধরে এই উপনির্বাচনকে ঘিরে বার বার উত্তপ্ত হয়েছে সাগরদিঘি। তৃণমূল এই নির্বাচনে অন্তত ৫৫ জন বিধায়ক, সাংসদ ও জেলা এবং রাজ্যের প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রীকে এক একটি অঞ্চলের পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে প্রচারে নামিয়েছিল। রাত দিন সাগরদিঘিতে পড়ে থেকে জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সাংসদ খলিলুর রহমান ও চেয়ারম্যান নবগ্রামের বিধায়ক কানাইচন্দ্র মণ্ডল প্রচার করেছেন। এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাদা কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়। আদিবাসীদের মন ফেরাতে জঙ্গলমহলের দুই আদিবাসী মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা ও সন্ধ্যারানী টুডু এক সপ্তাহ পড়ে থেকেছেন আদিবাসী পল্লিতে। নির্বাচন ঘোষণার দু’দিন আগে সাগরদিঘিতে পরিষেবা সামগ্রী বণ্টন করে গেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। নির্বাচনী প্রচারে সভা করে গেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সভায় বাম, কংগ্রেস ও বিজেপির অশুভ জোট নিয়ে সতর্ক বার্তা দেন। কিন্তু ফলে বোঝা যাচ্ছে, তা সে ভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি।

কংগ্রেস প্রার্থীর প্রচারে অধীর ছাড়াও এসেছেন সিপিএমের মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ৫ জন জেলা ও রাজ্য কমিটির সদস্য দু’সপ্তাহ ধরে ঘুরে ঘুরে তদারকি করেছেন নির্বাচনের। তাঁদের প্রতিটি সভাতেই ভাল ভিড় হয়েছে। ফলে কংগ্রেস প্রার্থী যে এ বারে আশ্চর্য ঘটাতে পারেন, এমন সম্ভাবনা উঠে আসছিল বার বার। এই উপনির্বাচনকে ঘিরে কংগ্রেসের একাধিক নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে রুজু হয়েছে একাধিক মামলা, যা কুৎসার পর্যায়েও পৌঁছে যায় বলে সাগরদিঘির মানুষের দাবি। কংগ্রেস নেতার গ্রেফতার, থানা ঘিরে বিক্ষোভ, খোদ প্রার্থী বাইরনের বিরুদ্ধেও হাওড়ার এক থানায় রুজু হয় এক বিতর্কিত মামলা। সরিয়ে দেওয়া হয় সাগরদিঘির ওসি অভিজিৎ সরকারকে। প্রচারে আসেন হাওড়া থেকে মৃত আনিস খানের বাবা সালেম খানও। বিরোধীদের ভোট প্রচারে বার বার উঠে এসেছে নওশাদ সিদ্দিকীর গ্রেফতার প্রসঙ্গও। কিন্তু মানুষের ক্ষোভ বাড়িয়েছে আবাস যোজনায় কাটমানির ব্যাপক দুর্নীতি।

কাবিলপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান বলেন, “২০১৯ ও ২০২১ সালের নির্বাচনে এনআরসি ভীতি সংখ্যালঘুদের কাছে ছিল বড় ইস্যু। তাই তারা বিজেপিকে ঠেকাতে তৃণমূলকে ভরসা করেছিল। সেই এনআরসি ভয় এখন আর নেই বললেই চলে। শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি দেখে তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল এতটাই, যাতে এ বারের নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা গেছে তাঁদের। এই ফল সে সবেরই পরিণতি।”সাংসদ সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, “পুরো ফলাফল পেলে কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসব। পঞ্চায়েত নির্বাচনে আবার ঘুরে দাঁড়াব আমরা।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement