কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির নাটমন্দিরে এল বাসন্তী প্রতিমা। শনিবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
বহু বছর পর কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির নাটমন্দিরে ফের বাসন্তী পুজোর আয়োজন হল। রবিবার ষষ্ঠীতে ঘটস্থাপন এবং সপ্তমীতে অধিবাসের মধ্যে দিয়ে পুজোর সূচনা। রাজপরিবারের সদস্য তথা কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায় জানান, আজ, রবিবার থেকে দশমীতে বিসর্জন পর্যন্ত সকলের জন্য অবারিত থাকবে রাজবাড়ির দুয়ার। যদিও ভোটের আগেই এই পুজো শুরুর পিছনে ‘রাজনীতি’ দেখছেন অন্য দলের নেতাকর্মীরা।
কথিত আছে, নদিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদারের হাত ধরেই নাকি বঙ্গদেশে বাসন্তী পুজোর তিথিতে অন্নপূর্ণা পুজোর প্রচলন হয়েছিল। মুঘল সেনাপতি মানসিংহকে যুদ্ধে সহায়তা করার পুরস্কারস্বরূপ সম্রাট জাহাঙ্গির ১৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে (মতান্তরে ১৬০৩) তাঁকে “মহারাজা” উপাধি প্রদান করেন। সেই খুশিতে অন্নপূর্ণার একনিষ্ঠ ভক্ত ভবানন্দ মূর্তি গড়ে দেবীর পুজো শুরু করেন। এখনও সেই প্রথা মেনে রাজবাড়িতে অন্নপূর্ণা পুজো হয়। এ বারও হবে। কিন্তু হঠাৎ বাসন্তী পুজো কেন?
শনিবার দুপুরে প্রচারের ফাঁকে অমৃতা বলেন, “রাজপরিবারে অনেক আগে থেকেই এই পুজো হত। মনে রাখতে হবে, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই পরিবারের ৩০তম রাজা। তাঁর দুর্গোৎসবের কথা সকলেরই জানা। কিন্ত অকাল বোধনের আগে রাজপরিবারে বাসন্তী পুজো হত।” যদিও সে পুজো কবে বন্ধ হয়েছিল তা নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। অমৃতা বলেন, “আমি বিয়ের পর এ বাড়িতে এসে বাসন্তী পুজো হতে দেখিনি। শুনেছি, নানা কারণে পূর্বসুরীরা তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।”
কংগ্রেসের নদিয়া জেলা সভাপতি অসীম সাহাও বলছেন, “আমার বয়স ৭৫ বছর। কৃষ্ণনগরেই জন্মকর্ম। আমি কোনও দিন রাজবাড়িতে বাসন্তী পুজো হতে দেখিনি।” তৃণমূলের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “এমনিতে রাজবাড়ি জনগণ থেকে বিছিন্ন। এই পুজোর উদ্দেশ্য, চার দিন ধরে দরজা খুলে রেখে জনসংযোগ করা।”
সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র মতে, “ওঁরা ধর্মচর্চা করেন রাজনৈতিক মুনাফা লাভের জন্য। তাকে সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা ওঁদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি।” তবে অমৃতার দাবি, “এই পুজোর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। এটা ভোট বা জনসংযোগের ব্যাপারও নয়। আমাদের মনে হয়েছে, সকলের কল্যাণের জন্য রাজবাড়ির এই ধারা পুনরুজ্জীবিত করা দরকার।”