ধর্মঘট: সুনসান বহরমপুরের খাগড়া বাজার এলাকা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
দেশ জুড়ে শ্রমিক ও কৃষক ধর্মঘটের দিন বৃহস্পতিবার জেলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেল। এই বন্ধ সফল করতে যেমন কোথাও ধর্মঘট সমর্থকদের বল প্রয়োগ করতে দেখা যায় নি। তেমনই অতীতের মত এদিন ধর্মঘট অসফল করতে রাস্তায় দেখা যায়নি শাসকদলকেও। কান্দি থেকে ফারাক্কা, বহরমপুর থেকে ডোমকল ধর্মঘটে সাড়া দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি বন্ধ ছিল। ছোটখাটো দোকান কিছু খোলা থাকলেও বড় দোকান বন্ধ ছিল সর্বত্র। রাস্তায় সরকারি বাসের উপস্থিতি থাকলেও বেসরকারি বাস রাস্তায় নামেনি। তবে একাধিক জায়গায় টোটোর দাপট দেখা গিয়েছে।
স্বাভাবিক ট্রেন চলাচল করলেও ভিড় ছিল না যাত্রিবাহী ট্রেনে। জেলায় সরকারি দফতর খোলা থাকলেও সেখানে হাজিরাও কম ছিল। বহরমপুর প্রশাসনিক ভবনেও ছবিটা একরকম থাকলেও অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সিরাজ দানেশ্বর বলেন, “সমস্ত সরকারি দফতরে স্বাভাবিক উপস্থিতি ছিল।” তবে সাধারণ মানুষজন মোটামুটি ঘরবন্দিই ছিলেন ধর্মঘটের দিন।
বৃহস্পতিবার কান্দি মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় বাম ও কংগ্রেস যৌথ ভাবে কান্দি-বহরমপুর রাজ্য সড়কের উপর কান্দি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায়, বড়ঞা ব্লকের আন্দি ও ডাকবাংলো মোড়ে, ভরতপুর, সালার ও খড়গ্রাম মোড়ে বন্ধের সমর্থনে একাধিক মিছিল করে। সকালের দিকে আনাজ বাজারসহ গ্রামীণ হাট আংশিক খোলা থাকলেও পরে সবই বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় একাধিক সরকারি বাস দেখা গেলেও যাত্রীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। তবে বেসরকারি বাস রাস্তায় দেখা যায়নি। এদিন সকালে হরিহরপাড়া বাজারের বেশ কিছু দোকান, আনাজ, মাছ বাজার ছিল খোলা। হরিহরপাড়া নওদার সমস্ত অফিসেই কর্মী আধিকারিকদের উপস্থিতি ভাল ছিল। তবে সাধারণ মানুষের হাজিরা কম ছিল। নওদায় সমস্ত দোকানপাট ছিল বন্ধ। সকাল থেকেই দফায় দফার মিছিল, পথ অবরোধ করে কংগ্রেস, সিপিএম সহ অন্য বন্ধ সমর্থকেরা। দু-এক জায়গায় সরকারি বাস আটকানোর চেষ্টা বিফলে যায় ধর্মঘট সমর্থনকারীদের। বন্ধের দিন বেলডাঙা বড়ুয়া, পাঁচরাহা, ছাপাখানা, মারুই বাজার কোথাও খোলা কোথাও বন্ধ ছিল। বেশির ভাগ দোকান ছিল বন্ধ। রাস্তায় মানুষ কম ছিল। জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কে বেসরকারি বাস ও ট্রেকার চোখে পড়েনি। জাতীয় সড়কে সরকারি বাসও তেমন নজরে আসেনি।
তবে কৃষ্ণনগর লালগালা শাখায় ট্রেন চলছে অন্য দিনের মত। কিন্তু অধিকাংশ ট্রেন দেরিতে চলেছে। বেলডাঙা পোস্ট অফিস ও সরকারি দফতর খোলা থাকলেও সেখানে অন্য দিনের মত লোকজন ছিল না। সুতি শমসেরগঞ্জ, ধুলিয়ান ও ফরাক্কায় বনধে মিশ্র সাড়া পড়েছে। অধিকাংশ সরকারি অফিস খোলা থাকলেও ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। দোকানপাট বন্ধ ছিল। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করলেও পুলিশ এসে তা তুলে দেয়। রাস্তায় সরকারি বাস চললেও বেসরকারি বাস খুব কম চলেছে। এলাকায় বন্ধকে কেন্দ্র করে কোন অঘটন ঘটেনি। শমসেরগঞ্জ, ও সুতিতে বামফ্রন্ট, কংগ্রেসের সঙ্গে এসডিপিআইকে বন্ধের সমর্থনে মিছিল করতে দেখা যায়। বহরমপুরেও বামেদের মিছিল হয়েছে।
তবে বিধানসভার ভোটে যৌথ লড়াইয়ের জন্য ধর্মঘটের সমর্থনে আগে একাধিক সভা হলেও ধর্মঘটের দিন সদর শহর সহ একাধিক জায়গায় বাম ও কংগ্রেসকে আলাদা আলাদা ভাবে মিছিল করতে দেখা গিয়েছে। সিটুর রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তুষার দে বলেন, “মানুষের স্বেচ্ছা সমর্থনে জেলায় সর্বাত্মক ধর্মঘট হয়েছে। আমাদের কোথাও কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি।’’
তাঁর কথায়, ‘‘সরকারের নির্দেশের ফলে বিগতদিনের অভিজ্ঞতা থেকে একাংশ সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করেছে। দফতরে তাদের উপস্থিতিই দেখা গিয়েছে।” আইএনটিইউসির জেলা সভাপতি মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “ধর্মঘট স্বতস্ফুর্ত হয়েছে। জেলাবাসীকে ধন্যবাদ।”