ভোটার কার্ডেও সিপিএম। নিজস্ব চিত্র
বামেদের ভরা-শূন্যতার মাঝেও তিনি সিপিএম শেখ!
তবে আর না, সিপিএম বলছেন, ‘‘ঢের হয়েছে, হেই বাপ পুরনো নামেই ফিরতে চাই ইবার!’’ নওদার কেদারচাঁদপুর গ্রামের বছর চল্লিশের সিপিএম শেখ এখন মরিয়া, বছর তিরিশেক আগে ফেলে আসা ফিকে হয়ে আসা ইয়ারনবি নামটাই এখন জুতসই মনে হচ্ছে তাঁর।
গত ক’বছরে এলাকায় এখন তিনি পাকাপোক্ত সিপিএম শেখ। শুধু তাই নয়, ভোটার কার্ড-রেশন কার্ড সবেই তিনি সিপিএম শেখ। তিন মেয়ের জন্ম শংসাপত্রে ‘পিতার নাম’ সিপিএম, স্ত্রী তাজিনা বিবির ভোটার এবং রেশন কার্ডে স্বামীর নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে সেই সিপিএম শেখ। গ্রামে গিয়ে সিপিএমের বাড়ি বললেই যে কেউ আঙুল উঁচিয়ে চিনিয়ে দেবেন, ‘হুই যে হুইটা অইল গিয়া সিপিএমের বাড়ি।’’ এলাকার লোক তাঁর নিজে হাতে লাগানো গাছের নামকরণ করেছে সিপিএমের গাছতলা। পথচলতি অনেক মানুষ, গ্রামের মানুষও অবসরে বিশ্রাম নেন সেই সিপিএম শেখের গাছতলায়।
কিন্তু নয়া নাগরিকত্ব আইনের জুজুতে সব যেন কেমন ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। গ্রামে টিকতে গেলে তাই নাম পরিবর্তন বাধ্যতামূলক হয়ে গিয়েছে যেন। নাম পরিবর্তনের আর্জি জানিয়ে ইতিমধ্যেই সিপিএম খাদ্য-সরবরাহ দফতরে নথিপত্র জমা দিয়েছেন। ভোটার কার্ডে সংশোধনের তালিকায় ইয়ারনবি হওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে রাতও জাগতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বলছেন, ‘‘গ্রামে থাকতি অলি এ ছাড়া উপায় কী বলেন, যা একখান আইন করস্যে!’’ স্বামীর পথ ধরে তাঁর স্ত্রীও এখন স্বামীর নাম ইয়ারনবি চাইছেন। লাইনে হত্যে দিয়েছেন তিনিও। ভোটার তালিকায় স্বামীর নাম সংশোধনের জন্য তিনি নথিপত্র জমা দিয়েছেন ঝাউবোনা প্রাথমিক স্কুলে। ১৬ জানুয়ারি ব্লক অফিসে রয়েছে তাদের নাম সংশোধনের সেই শুনানি। সিপিএম বলছেন, ‘‘যে করেই হোক, নামটা ইবার বদলাতেই হবে!’’
সিপিএমের বাবা জালালুদ্দিন সেখ বলছেন, ‘‘দুই মেয়ে আর ছয় ছেলের মধ্যে বড় ইয়ারনবি। যে বছর ইয়ারনবির জন্ম, সে বারই ভোটে জিতে আমার ভাই আনার আলি কেদারচাঁদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন থেকেই সবাই ওকে সিপিএম বলেই ডাকত। আসল নামটা হারিয়েই গিয়েছিল সেই থেকে।’’
স্থানীয় বাসিন্দা সৌরভ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই আমরা তো ওঁকে সিপিএম কাকা নামেই জানি। নাম পরিবর্তনের জন্য ছোটাছুটি করছেন দেখে জানলাম ওঁর আসল নাম ইয়ারনবি।’’