কুরুক্ষেত্র: দুই রোগীমৃত্যুর ঘটনায় নার্সিংহোমের সামনে তখন ধুন্ধুমার। মঙ্গলবার রানাঘাটে। নিজস্ব চিত্র
তাঁদের অস্ত্রোপচার হয়েছিল একই নার্সিংহোমে।
ঘটনাচক্রে, দু’জনে মারাও গেলেন একই দিনে, আর সেই মৃত্যু ঘিরেই উঠল চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ। যার জেরে, মঙ্গলবার সকাল থেকে রানাঘাটের চৌরঙ্গিতে, দু’দুটি দেহ ওই নার্সিংহোমের সামনেই ফেলে রেখে ভাঙচুর চলল নার্সিংহোমে। জনতা চড়াও হল সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বাড়িতেও।
পরিস্থিতি সামাল দিতে নামল পুলিশ। ঘণ্টা দুয়েকেও তপ্ত চৌরঙ্গি শান্ত না হওয়ায় তলব হল কমব্যাট ফোর্সের।
সোমবার সন্ধ্যায় রানাঘাটের ‘এভিনিউ নার্সিংহোমে’, জরায়ুতে অস্ত্রোপচার হয়েছিল হবিবপুরের অনিতা পালের (৪৫)। অস্ত্রোপচার করেছিলেন চিকিৎসক নীলাঞ্জন মিত্র। তবে অস্ত্রোপাচার হলেও, রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। বাধ্য হয়ে, দায় এড়িয়ে ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁকে ঠেলে দিয়েছিলেন রানাঘাটেরই অন্য এক হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে তাঁকে ভর্তি করতেই চায়নি ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। মধ্য রাতে তাঁকে কল্যাণীর জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসাপালে নিয়ে যাওয়া হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান অনিতা।
সাত মাস আগে ওই এভিনিউ নার্সিংহোমেই রানাঘাট আইশতলার বাসিন্দা নমিতা দাসের (২৬) অস্ত্রোপচার করে ছিলেনন অশোক মৈত্র। রোগীর বাড়ির অভিযোগ, তার পর থেকেই একাধিক জটিলতা দেখা দিয়েছিল নমিতার। তবে, বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও অশোকবাবু তাঁকে আর দেখতে চাননি বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত ভর্তি করানো হয়েছিল জেএনএম মেডিক্যাল কলেজে। সোমবার, সেখানেই মারা যান নমিতা।
এ দিন, সকালে দুই মহিলার দেহ এভিনিউ নার্সিংহোমের সামনে রেখে তাঁদের বাড়ির লোক বিক্ষোভ শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শুরু হয়, নার্সিংহোমে ভাঙচুর। নার্সিংহোমের কাছেই নীলাঞ্জনবাবুর বাড়ি। ক্ষিপ্ত জনতা তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায়। জনা কুড়ি পুলিশ কর্মীর পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আসে, কমব্যাট ফোর্স। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কল্যাণী) স্বাতী ভাংনানি এসে আশ্বাস দেন, তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুলিশ সুপার শিষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘রোগীর বাড়ির লোক চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ করেছেন। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষও ভাঙচুরের অভিযোগ করেছে। দু’টি অভিযোগই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়।
অভিযুক্ত নীলাঞ্জনবাবু অবশ্য জানিয়ে দিচ্ছেন, কথা বলতে চান না তিনি। তবে অশোকবাবু বলেন, ‘‘আমার চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি ছিল না। কী করে কী হয়েছে বলতে পারব না।’’ দায় উড়িয়ে দিয়েছেন, ওই নার্সিংহোমের মালিক অঞ্জনা কুণ্ডুও। তিনি বলেন, ‘‘দু’টি ঘটনাতে নার্সিংহোমের কোনও গাফিলতিই ছিল না। দুই মহিলারই সরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে।’’