কবে ফিরবে স্কুলের এই দৃশ্য! ফাইল চিত্র।
কোভিড আবহে দীর্ঘ দিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আগামী বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পাঠ্যক্রম ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু কবে পরীক্ষা হবে এবং বিদ্যালয় না খোলায় পাঠ্যক্রম কমলেও তা আদৌ শেষ করা যাবে কি না, তা নিয়ে স্বস্তিতে নেই পড়ুয়া থেকে অভিভাবক কেউই। যার ফলে স্কুলছুটের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
কোভিড-বিধি মেনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে, শহরের সিনেমা হল রেস্তোরাঁ-সহ প্রায় সব কিছুই খুলেছে বন্ধ শুধু শিক্ষায়তন। অভিভাবকদের অধিকাংশের তাই দাবি, স্পেশ্যাল ক্লাস শুরু করার জন্য বিদ্যালয়গুলিকে অনুমতি দিক সরকার। যদিও জেলার প্রায় সব বিদ্যালয়ই তাদের পড়ুয়াদের জন্য অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছিল, কিন্তু তা সে ভাবে সফল না হওয়ায় অনেক পড়ুয়া পড়েছে সমস্যায়। ওই সব এলাকার বেশ কিছু বিদ্যালয়ের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা তাদের মূল পাঠ্যক্রম নিয়ে এখনও অন্ধকারে বলে দাবি বিদ্যালয়গুলির। টানা লকডাউনে বিদ্যালয়মুখী না হওয়ায় বহু ছাত্রছাত্রী স্কুলছুটও হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। একই সঙ্গে পরীক্ষা কবে হবে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্রই বা কেমন হবে, তার সম্বন্ধে ধারণা না থাকলে পাঠ্যক্রম কমিয়ে পড়ুয়াদের লাভ হবে না বলে মনে করেন অভিভাবকদের সিংহভাগ। হরিহরপাড়া মালোপারা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাসচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘‘পাঠ্যক্রম তো কমল কিন্তু পরীক্ষা কবে হবে সেটা এখনও জানা যায় নি। আবার পরীক্ষার তারিখ না জানা গেলে তাদেরকে প্রস্তুত করার মতো সময় না পাওয়া গেলে আশানুরূপ ফল হবে না।” অভিভাবক মৃন্ময়ী দত্ত বলেন, “যারা অনলাইনে পড়বার সুযোগই পেল না তাদের ক্ষতি হবে মারাত্মক।” হিকমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “অনলাইন পড়াশোনায় একটা বড় অংশের পড়ুয়া পঠন পাঠনের বাইরেই থেকে গিয়েছে। পরীক্ষার আগে অন্তত দু’মাসের জন্য পড়ুয়াদের ক্লাস করার সুযোগ দিলে ভাল হয়।” সপ্তাহে তিন দিন করে হলেও স্কুল খোলার আবেদন জানিয়েছে শিক্ষক সংগঠনগুলিও। নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক দুলাল দত্ত বলেন, “স্বাস্থ্যবিধির মান্যতা দিয়ে ডিসেম্বর মাস থেকে এক দিন অন্তর অন্তত দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য বিদ্যালয় খোলা হলে পড়ুয়ারা শিক্ষকদের সংস্পর্শে আসবে। ফলে নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী কিছুটা হলেও তৈরি হতে পারবে।’’ পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা যুগ্ম সম্পাদক রাজেশ মণ্ডল বলেন, “দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা বিদ্যালয়ে না এসে জীবনের বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হলে ফল খারাপ হতে বাধ্য আর তার ফল পড়ুয়াদের ভুগতে হবে আজীবন।’’
স্কুল খোলার ব্যপারে সরকার চিন্তাভাবনা করছে জানিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা মাধ্যমিক পরীক্ষার আহ্বায়ক শেখ মহম্মদ ফুরকান বলেন “এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে করোনাকালে ছাত্রদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকার সমস্ত স্তরের পড়ুয়া, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের কথা চিন্তা করেই পাঠ্যক্রম কমিয়েছে।’’