আশঙ্কা ছিল, বেশি রাতে পুলিশের নজরদারি শিথিল হওয়ার সুযোগে হয় তো বাজি পোড়াতে শুরু করবে নিয়ম না মানা বাসিন্দারা। শনিবার রাত ৯টার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বহরমপুর, জঙ্গিপুর-সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু বাজির আওয়াজ শোনা গেলেও মোটের ওপর প্রায় শব্দহীন রাতই কেটেছে কালীপুজোর রাতে। করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের সচেতনতা, হাইকোর্টের নির্দেশ এবং পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতার কাছে হার মানল বাজি।
প্রতিবার কালীপুজোর সন্ধ্যা থেকে দেদার পুড়তে থাকে আতসবাজি ও শব্দবাজি। কান পাতাই দায় হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু শনিবার সে ভাবে বাজি পোড়েনি। রাতে শহর ও শহর লাগোয়া এলাকায় কিছু বাজির শব্দ এসেছে। তবে তা পরিমাণে খুবই কম। অন্যদিকে, রবিবার শমসেরগঞ্জ, ধুলিয়ান এলাকায় দিওয়ালি ধুমধাম করে পালন করা হয় অন্যবার। এদিন যাতে বাজি না পোড়ানো হয়, সেদিকে পুলিশের নজর রয়েছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘জেলা পুলিশের কন্ট্রোলরুমের ফোন নম্বর, থানার ফোন নম্বর বা জেলা পুলিশের মোবাইল অ্যাপসে বাজি পোড়ানোর বিষয়ে একটিও অভিযোগ আসেনি। বাজি পোড়ার হাতে গোনা দু’একটি শব্দ কানে এসেছে।’’
জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জঙ্গিপুর পুলিশ জেলাতেও বাজি পোড়ানোর ঘটনা নেই। এ বিষয়ে কোনও অভিযোগও আসেনি।’’ বহরমপুর শহরে সেভাবে বাজি না পোড়ায় বাসিন্দারা খুশি হয়েছেন। বহরমপুরের গোরাবাজারের বাসিন্দা তথা গোরাবাজার আইসিআইয়ের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত দত্ত বলেন, ‘‘দিন কুড়ি আগে হয়ে যাওয়া দুর্গাপুজোতেও বহরমপুর শহরে বাজি পুড়েছে। কিন্তু এবার কালীপুজোয় বাজি পোড়েনি বললেই চলে। খুব ভাল লাগছে বাজি পোড়ানো বন্ধ থাকায়। আমরা চাই বরাবরই এমন নিয়ম চালু থাকুক।’’ তিনি জানান, বিগত বছরগুলিতে কালীপুজোর সন্ধ্যার পর থেকে বাজির শব্দে রাস্তায় চলাফেরা করা দায় হয়ে দাঁড়ায়। এবার সে সবের কিছুই ছিল না। রাত একটা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেছি। দু’-একটি বাজি ফাটার শব্দ কানে এসেছে। বহরমপুরের আইনজীবী পীযূষ ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশ প্রশাসন তৎপরতার সঙ্গে বাজি পোড়ানোর বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর করায় ভাল লাগছে। আশা করছি বরাবরই মানুষ এভাবে বাজি ছাড়াই উৎসব উদযাপন করবেন।’’ করোনা পরিস্থিতিতে সব ধরনের বাজি বিক্রি ও পোড়ানো বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। নির্দেশ পাওয়ার পরে মুর্শিদাবাদের দুই পুলিশ জেলার পক্ষ থেকে বাজির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। বাজি বিক্রির অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলায় প্রায় ২৫ হাজার বাজি উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যদিকে, জঙ্গিপুর পুলিশ জেলায় প্রায় ১২ লক্ষ টাকার বাজি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া, পুজোর আগের দিন ও পুজোর পরের দিন বাজি পোড়ানো বন্ধের বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশিকা বাসিন্দাদের স্মরণ করিয়ে দিতে মাইকে ঘোষণা করা হয়েছে। এসবের জন্যই এবার বাজি বিক্রি এমনিতেই খুবই কম ছিল। তার ওপর পুলিশি নজরদারি ছিল। সেই সঙ্গে বাজি পোড়ানোর ফলে দূষণে শ্বাসকষ্টের রোগী ও করোনা আক্রান্তদের সমস্যা বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা করা হয়েছিল। মানুষ এ নিয়ে সচেতনতার নজির রেখেছে।