প্রতীকী ছবি।
টানা আট দিন করোনা শূন্য গোটা মুর্শিদাবাদ জেলা। স্কুল খুলেছে, সভা সমিতি চলছে, বেরিয়েছে বিজেপির রথযাত্রাও। রাস্তায় নেমেছে সরস্বতী পুজোয় কিশোর কিশোরীদের ভিড়। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, একজনও কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি জেলায়। কিন্তু এই স্বস্তির মাঝেও মিলল আশঙ্কার বার্তা। চিকিৎসকরা এখনও করোনার বিপদের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
বিশেষ করে জেলা জুড়ে যেভাবে রাজনৈতিক সভা সমিতি চলছে তা যে কোনও মুহূর্তে বড় ধরনের সংক্রমণের বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে জেলার মানুষকে সতর্ক করে দিল চিকিতসক সংগঠন আইএমএ।
আইএমএ-র চিকিৎসকদের মতে, বিপদ আসতে পারে স্কুলগুলি থেকেও। কারণ স্কুল খুলেছে তাই নয়, সরস্বতী পুজোয় যেভাবে স্কুলগুলিতে ছেলে মেয়েদের জমায়েত দেখা গেছে তা উদ্বেগের। কারণ ছাত্র ও শিক্ষকদের এখনও টিকাকরণ শুরু হয়নি। সে টিকাকরণ কবে হবে তারও নিশ্চয়তা নেই। ছাত্রদের প্রতিরোধ ক্ষমতাও অপেক্ষাকৃত কম।
করোনার ভয় কমায় স্বভাবতই ফের যেন বেলাগাম হয়ে পড়েছে জেলার জনজীবন।
ইতিমধ্যেই প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনের প্রচারে সভা শুরু হয়েছে পুরোদমে সর্বত্র। চলছে পরিবর্তন বিজেপির রথযাত্রা। হাজার হাজার মানুষের জমায়েতে মাস্কের বালাই নেই কোথাও। এমনকি খোদ মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক থেকে প্রশাসনিক কর্তা মাস্ক এখন ব্রাত্য সর্বত্রই। পুলিশের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতাও নেই বললেই চলে। এই ভাবে চলাফেরায় স্বভাবতই চিন্তায় চিকিৎসক মহল।
চিকিৎসকদের কথায়, করোনা সংক্রমণের সাময়িক বিরতি ঘটলেও যে ভাবে জমায়েত বাড়ছে এ জেলাতেও, তাতে ফের বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাঁরা জানাচ্ছেন, বরং ভোটের প্রচারে বাড়ি বাড়ি যান, কিন্তু জমায়েত বন্ধ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের উচিত এ নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা।
চিকিৎসক সংগঠন আইএমএ-র জেলা সভাপতি রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “এই প্রবণতা থেকে ভয়ানক ভুল হতে চলেছে। এখন প্রথম শ্রেণির করোনা যোদ্ধাদের টিকাকরণ সবেমাত্র সম্পন্ন হয়েছে। দেশ জুড়ে আনুমানিক যে সংখ্যক মানুষের টিকাকরণ করা গেলে হার্ড ইম্যুনিটি অর্জন করা সম্ভব তা হতে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় লাগতে পারে। ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ পাওয়ার পর আরও ১৫ দিন অর্থাৎ সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ দিন সময় না গেলে সেরো পজিটিভিটি আসবে না। অর্থাৎ বিপদ কাটবে না। পাশ্চাত্য দেশগুলিতেও দেখা গেছে সেকেন্ড ওয়েভ, থার্ড ওয়েভ এসেছে। ১০০ বছর আগে ইনফ্লুয়েঞ্জার অতিমারিও প্রায় দু’বছর স্থায়ী হয়েছিল দেশজুড়ে। করোনা এক বছর পেরিয়েছে মাত্র। সেক্ষেত্রে আমাদের একটু ভুলে সংক্রমণ ব্যাপক ভাবে ছড়াতে পারে।’’ তিনি জানান, কেরলেও নববর্ষ উৎসব পালনের ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের নজির রয়েছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলিরও উচিত, সমাবেশের রেষারেষি ভুলে জন সমাবেশে যত কম সম্ভব লোক জমায়েত করা।”
তিনি জানান, জেলা জুড়ে যে ভাবে সভা সমাবেশগুলিতে জমায়েত হচ্ছে হাজার হাজার লোক। সামাজিক দূরত্ব বিধি তো কোন ছাড়, তাদের মুখে মাস্কটাও নেই। বাজার হাট সর্বত্রই একই জিনিস চোখে পড়ছে। যারা জন প্রতিনিধি, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, পুলিশ প্রশাসন, প্রশাসনিক আধিকারিক তাদের অন্তত মাস্কটা পরা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হল তাদের মুখেও মাস্ক নেই সভা সমিতিতে।