জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য
কংগ্রেসের অন্দরে কথাটা ঘুরছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। শেষ পর্যন্ত তা-ই সত্যি হল। দলের নদিয়া জেলা সভাপতির পদ থেকে অসীম সাহাকে সরিয়ে নতুন সভাপতি করা হল জ্যোর্তিময় ভট্টাচার্যকে। লোকসভা ভোটের আগে প্রদেশ নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তে কিছুটা হলেও দোলাচল তৈরি হয়েছে দলের কর্মীদের মধ্যে।
২০১৪ সালে শঙ্কর সিংহকে সরিয়ে অসীম সাহাকে জেলা সভাপতি করেছিলেন তদানীন্তন প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী। সেই অধীর-ঘনিষ্ঠতাই শেষ পর্যন্ত তাঁর কাল হয়ে দাঁড়াল বলে মনে করছেন কর্মীদের অনেকে। ইতিমধ্যে অধীরের পরিবর্তে প্রদেশ সভাপতি হয়েছেন সোমেন মিত্র। জেলাস্তরেও অধীর ঘনিষ্ঠদের সরিয়ে তিনি নিজের বিশ্বস্ত লোকেদের ফিরিয়ে আনবেন বলে দলে অনেকেরই ধারণা।
এই মুহূর্তে নদিয়া জেলায় কংগ্রেস কার্যত সাইনবোর্ড। দলে কারও-কারও ধারণা ছিল, এই দুঃসময়ে অসীম ছাড়া দায়িত্ব সামলানোর মতো আর কোনও মুখ নেই। এবং সেটা ভেবেই কিছুটা হলেও আশ্বস্ত ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠেরা। কিন্তু তাঁদের সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে দীর্ঘদিন রাজনীতির মূলস্রোতের বাইরে থাকা জ্যোর্তিময়কে ফিরিয়ে আনা হল।
কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজে পড়ার সময়েই ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি জ্যোতির্ময়ের। ছাত্র সংসদের পদ সামলে পরে সরাসরি কংগ্রেসের রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছিলেন তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতার দৌলতে। কলেজ থেকে সদ্য পাশ করে মাত্র ২২ বছর বয়সে কৃষ্ণনগর শহর কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৮৮ সালে দলের প্রতীকে পুরসভা নির্বাচনে জিতে কাউন্সিলর হন। পরের বছর কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে সিপিএমের রেণুপদ দাসের কাছে প্রায় ১৪ হাজার ভোটে পরাজিত হন।
১৯৯০ সালে কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান ভোলানাথ দত্ত মারা গেলে দল ওই পদে জ্যোতির্ময়কে বসায়। এর পর ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালে তাঁকে আবারও প্রার্থী করা হয়। জিততে পারেননি। কোনও বার জিততে না পারলেও দলে কিন্তু জ্যোতির্ময়ের গ্রহণযোগ্যতা কমেনি। ১৯৯৪ সালে তাঁকে জেলা সভাপতি করা হয়।
জ্যোর্তিময় দীর্ঘ দিনের পোড় খাওয়া নেতা। শঙ্কর সিংহ, গৌরীশঙ্কর দত্ত, অজয় দে-র মতো নেতারা যখন দাপটের সঙ্গে কংগ্রেস করছেন, সেই সময়েও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ছিল না কর্মীদের মধ্যে। সেই সময়েও তিনি জেলা সভাপতির দায়ীত্ব সামলেছেন।
তবে সেই দফায় বছর দুয়েক জেলা সভাপতি পদে ছিলেন জ্যোতির্ময়। তার পরে তাঁর স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আস্তে আস্তে তিনি রাজনীতির মূলস্রোত থেকে সরে যান। মন দেন আইন ব্যবসায়। বর্তমানে কৃষ্ণনগর আদালতের বর্ষীয়ান আইনজীবী তিনি। এ বার তাঁর উপরেই ফের আস্থা রেখেছেন প্রদেশ সভাপতি। এতে কংগ্রেস কর্মীরা কতটা চাঙ্গা হবেন তা নিশ্চিত নয়, তবে লোকসভা ভোটের আগে তা বড় চমক নিঃসন্দেহে।
জেলা সভাপতি পদে নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পরে জ্যোর্তিময় বলেন, “দল দায়িত্ব দেওয়ায় আমি খুশি। আগে ব্লকে-ব্লকে ঘুরে কর্মীদের সঙ্গে দেখা করব। তার পর দলীয় কর্মসূচি নেব। কারণ এই দুর্দিনে যাঁরা দলটা করছেন, তাঁরাই তো আসল।” জেলা সভাপতির পদ হারিয়ে স্বভাবতই হতাশ অসীম সাহা। তবে তিনি বলেন, “পতাকা ছাড়ব না। কংগ্রেসটাই করে যাব সারা জীবন।”
সত্যি বলতে, নদিয়া জেলায় খুব কিছু হারানোর নেই কংগ্রেসের। এখন রাজা বদল করে তারা লাভ কিছু করতে পারে কি না, সেটাই দেখার।