শোকস্তব্ধ পরিবার। পারুলিয়ার দেবগ্রামে।
মেয়ের শখ মেটাতে অভাবের সংসার সামলে কোনওক্রমে দু’টি সোনার দুল গড়ে দিয়েছিলেন আজিজুল শেখ। দিনভর এ বাড়ি ও বাড়ি করে বেড়ানো বছর চারেকের আরমিনা খাতুন ক’দিন ধরেই পাড়া পড়শিকে দেখিয়ে বেড়াচ্ছিল সেই সোনার দুল জোড়া। কাল হল তাতেই। অভিযোগ, পড়শি দুই মহিলা তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে ফেলে দিয়েছিল পুকুরে।
মঙ্গলবার দুপুরে, খড়গ্রামের পারুলিয়ার দেবগ্রামে ওই ঘটনার পরে নাসিমা বিবি ও ফাইনুর বিবিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কান্দি আদালত তাদের তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
কান্দির এসডিপিও যশপ্রীত সিংহ বলেন, “কানের দুল নেওয়ার পরে ওই নাবালিকা অভিযুক্তদের নাম বলে দিতে পারে ভেবেই খুন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’’ প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ওই দিন দুপুরে খেলা করতে করতে ওই নাবালিকা নাসিমার বাড়িতে গিয়েছিল। তার পর থেকেই তার কোনও খোঁজ পাচ্ছিলেন না বাড়ির লোক।
খোঁজখবর শুরু হয় সন্ধে থেকে, গ্রামের বিভিন্ন পুকুরে ফেলা হয় জাল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফাইনুরের বাড়ির লাগোয়া পুকুরে ভেসে ওঠে আরমিনার দেহ। পুলিশ দেখেই বুঝতে পারে এ ঘটনা শ্বাসরোধ করে খুনের। কিন্তু খুন কেন? মেয়েটির কানের দুল জোড়া খোয়া গিয়েছে দেখেই সন্দেহ হয় পুলিশের। শুরু হয় জেরা। আর তাতেই ভেঙে পড়ে পড়শি ওই দুই মহিলা। আজিজুল শেখ বলেন, “আমার কাছে দুটো টাকা নিয়ে পাড়া বেড়াতে বেরিয়েছিল আরমিনা। আর যে ফিরবে না জানব কী করে! অনেক কষ্টে গড়িয়ে দিয়েছিলাম দুল দু’টি, তার জন্য খুন করে দেবে মেয়েটাকে!’’
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত ফাইনুর ও নাসিমা সম্পর্কে জা। একই পরিবারে বাস। আরমিনার অবাধ যাতায়াত ছিল তাদের বাড়িতে। আজিজুল বলছেন, ‘‘সেখানে অনায়াস চলাচল ছিল মেয়েটার। আমরা ভাবতেই পারিনি যে ওই এক টুকরো সোনার দুলের জন্য মানুষ এমন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।’’
তবে এত কাণ্ডের পরেও দুল দু’টি উদ্ধার করা যায়নি। বুধবার, ধৃতদের কান্দির এসিজেএম আদালতে তোলা হয়, ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম শুভজিৎ রক্ষিত অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন নাকচ করে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
তবে সামান্য কানের দুলের জন্য খুনের ঘটনা এ জেলায় প্রথম নয়। গত মার্চে লালগোলার বিলবোরাকোপরা ছোট্ট গ্রামে কন্যা-অন্ধ বাবা রফিকুল শেখও কষ্টের সঞ্চয় থেকে সোনার দুল আর পায়ের তোড়া গড়ে নিজের হাতে পরিয়ে দিয়েছিলেন মেয়েকে। নেচে নেচে তা পরেই বেরিয়ে গিয়েছিল সুরাইয়া খাতুন (৬)। আর ফেরেনি। দিনভর খোঁজাখুঁজির পরে, সে মেয়ের দেহ পাওয়া গিয়েছিল ধান খেতের পাশে। কিছু দিন আগে একই ভাবে দেড়-আনা নাকছাবির জন্য খুন হতে হয়েছিল জিয়াগঞ্জের এক বালিকাকেও।