স্কুলের সামনে বিক্ষোভ। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
ক্লাসের বাইরে একাদশ শ্রেণির কিছু ছাত্রী গল্প করছিল। ক্লাস পরিদর্শনে গিয়ে তাদের দেখেই রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন স্কুল সভাপতি। অভিযোগ, একটা লোহার রড নিয়ে এসে বেদম মারতে থাকেন ছাত্রীদের! তাতে দুই ছাত্রী এতটাই আহত হন যে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই পালিয়েছেন অভিযুক্ত স্কুল সভাপতি অমিত বিশ্বাস।
সোমবার শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ঘটনা এখন এলাকার লোকের মূল আলোচ্য। এমনিতেই এখন ছাত্রছাত্রীদের গায়ে হাত তোলা নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও অতি তুচ্ছ বিষয়ে তিনি হঠাৎ কিশোরীদের উপর রড নিয়ে চড়াও হলেন কেন, তা অনেকেরই বোধগম্য হচ্ছে না। তাঁকে দ্রুত গ্রেফতার করার দাবিতে মঙ্গলবার স্কুলের সামনে অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখান।
আহতে ছাত্রীদের বাড়ির লোক সোমবার রাতেই নাকাশিপাড়া থানায় অমিত বিশ্বাস, তাঁর প্রায় সর্বসময়ের সঙ্গী রাজু মণ্ডল ও স্কুলের অমিত-ঘনিষ্ঠ কর্মী সম্বরণ মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। সম্বরণ ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন।
স্থানীয় ও স্কুল সূত্রের খবর, অমিত বিশ্বাস এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখান থেকে যা আয় হয় তাতেই মূলত তাঁর সংসার চলে। তিনি এলাকায় শাসক দলের অন্যতম নেতা। দীর্ঘদিন ধরে শিবপুর জনকল্যাণ সংঘ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতির
পদেও রয়েছেন।
সোমবার স্কুলে একটি বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন তিনি। সেটি শেষ হওয়ার পর যখন ক্লাস পরিদর্শনে যাচ্ছেন তখনই এই কাণ্ড ঘটে। তাঁর মারে বর্ষা মণ্ডল ও শিল্পা মণ্ডল নামে একাদশ শ্রেণির দুই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। প্রথমে তাদের বেথুয়াডহরি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও সেখান থেকে কৃষ্ণনগরে জেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার বিকেলেই শিবপুর গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকে শিক্ষকদের স্কুলে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখান। পরে নাকাশিপাড়ার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। স্থানীয় ও ছাত্রীদের অভিযোগ, অমিতবাবু এর আগেও যখন-তখন পড়া চলাকালীন ক্লাসে ঢুকে পড়েছেন এবং বিনা কারণে ছাত্রছাত্রীদের মেরেছেন।
অন্যতম আহত বর্ষা মণ্ডলের বাবা সুফল মণ্ডলের কথায়, ‘‘প্রধান শিক্ষকের কাছে মারের কারণ জানতে চেয়েছিলাম। উনি কিছুই বলতে পারেনি। আমরা অমিত বিশ্বাসের শাস্তি চাই। যত ক্ষণ তা না-হবে আমাদের বিক্ষোভ চলবে।’’ প্রধান শিক্ষক সন্দীপ দে বলেন, ‘‘বিষটি শোনামাত্র আহত ছাত্রীদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। পরে অভিভাবকেরা এই বিষয়ে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। আমি তা থানায় জমা দিয়েছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’’