নবদ্বীপের উত্তর-পূর্ব কোণে গঙ্গার পূর্ব পারের মায়াপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম বল্লালদিঘিতেই রয়েছে রহস্যের চাদরে মোড়া বল্লাল ঢিবি। নিজস্ব ছবি।
প্রায় হাজার বছরের প্রাচীন শহর কেমন ছিল, তার ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা যে স্মারকটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন, বাংলার সেই বল্লাল ঢিবি ‘উধাও’ কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির রিপোর্টে। দেশের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক সৌধ সম্পর্কে রিপোর্ট তৈরি করে থাকে ওই কমিটি। তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, দেশের মোট ২৪টি সৌধের কোনও হদিস মিলছে না! তার মধ্যেই একটি হল নদিয়ার বল্লাল ঢিবি। যদিও জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, বল্লাল ঢিবি যেখানে থাকার কথা, সেখানেই রয়েছে।
নদিয়ার নবদ্বীপের উত্তর-পূর্ব কোণে গঙ্গার পূর্ব পারের মায়াপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম বল্লালদিঘি। সেখানেই রয়েছে রহস্যের চাদরে মোড়া বল্লাল ঢিবি। কিন্তু কী এই বল্লাল ঢিবি? ইতিহাসবিদদের অনেকে মনে করেন, এটি সেন রাজাদের প্রাসাদের ধ্বংসস্তূপ। কারও আবার দাবি, এটি আদতে বৌদ্ধ স্তূপ। প্রত্নতত্ত্বের গবেষকদের একাংশের মত, এই ঢিবি ঠিক ভাবে উৎখনন হলে মধ্যযুগের ইতিহাসের গতিপথটাই হয়তো বদলে যেত।
১৯৮২ সালে প্রথম বা বল্লাল ঢিবি উৎখননের কাজ শুরু করে ‘ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ’। ১৯৮৯ সাল নাগাদ মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় সেই খননকাজ। এই খননকাজের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা প্রয়াত অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমান ছিল, বল্লাল ঢিবির উত্তর দিকে মাটির নীচে কম-বেশি এক কিলোমিটার খুঁড়লেই মিলতে পারে মধ্যযুগের ইতিহাসের চাপা পড়ে থাকা বহু কাহিনি। এমনই একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সৌধ কেন্দ্রীয় রিপোর্টে ‘নিখোঁজ’ ঘোষিত হওয়ার পরেই আলোড়ন তৈরি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় রিপোর্টে দাবি, ইতিমধ্যেই জলের নীচে তলিয়ে গেছে দেশের ১২টি সৌধ। ‘নগরায়ণের কারণে’ হারিয়ে গিয়েছে ১৪টি সৌধ। তার বাইরেও এমন কিছু সৌধ রয়েছে, যার কোনও হদিসই মিলছে না। সেই তালিকায় বল্লাল ঢিবির উল্লেখ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে জেলায়। নদিয়ার জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি এ বিষয়ে বলেন, ‘‘নদিয়া জেলার অন্যতম পর্যটনস্থল বল্লাল ঢিবি। জেলার পর্যটন মানচিত্রে এর অস্তিত্ব রয়েছে।’’