জমি থেকে ধান তুলে বাড়ির উঠোনে চলছে মেশিনে ঝাড়াই। সেই ঝাড়াই ধান কুটিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে নবান্নও। কিন্তু নোটের ধাক্কায় তাতেও যেন প্রাণ নেই।
থাকবে কী করে? নতুন ধান তো উঠল। কিন্তু বিক্রিবাটার কী হবে?
সাগরদিঘির মণিগ্রামে দেবজ্যোতি দে-র বিঘে তিরিশ জমিতে ধানের ফলন ভাল হয়েছে। কিন্তু সরকারি দর কুইন্ট্যালে ১৪৫০ টাকা দূরে থাক, এখন ১১০০ টাকাতেও কেনার লোক নেই। ধাননির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতি তাই সঙ্কটে। তার ছোঁয়া লেগেছে নবান্নেও।
নতুন চাল শিলে বেটে তাতে নানা ফলমূলের টুকরো দিয়ে বানানো হয় সিন্নি বা মলিদা। তার সঙ্গে নতুন চালের চিঁড়ে, দই, জিলিপি, বোঁদে দিয়ে জলযোগ। পরে কলা, আখ, মুলো-সহ নানা ভাজা, পঞ্চব্যঞ্জন দিয়ে ভূরিভোজ। কৃষিনির্ভর চাঁই ও ধানক সমাজে নবান্ন যেন লক্ষ্মীপুজোর মত। তাঁদের বেশির ভাগই প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষি। খুড়িপাড়া গ্রামের দ্বিজপদ মণ্ডল বলেন, “বেশির ভাগ বাড়িতেই ধানের বেচাকেনার উপরে নির্ভর করে উৎসবের আয়োজন। খদ্দেরের টানেই এ বারে জমক কম নবান্নে।”
মির্জাপুরের সত্তরোর্ধ্ব শোভারানি চট্টোপাধ্যায় জানান, নবান্ন সাধারণত অঘ্রানের শুক্লপক্ষে হয়। আগে নতুন ধান ঢেঁকিতে ভেঙে শিল পাটায় বেটে তৈরি হত মলিদা। সকাল থেকেই স্নান সেরে কাজে লেগে পড়তেন মেয়েরা। বাড়িতে আসতেন মেয়ে-জামাই আর কুটুম্বরা। পাতে পড়ত কলাই ডালের জিলিপি ও বোঁদে। পরের দিন হত ‘বাসি নবান্ন’। অর্থাৎ সে দিন বাড়িতে মহিলারা উনুন জ্বালাতেন না। নবান্নে রান্না করা খাবারই বাসি খেতে হত সবাইকে। নবান্নের খাটনির পরে এই বিশ্রামের ব্যবস্থা। শোভারানি বলেন, “এ বারে ফলন হয়েছে ভাল। তবু যেন হাসি নেই চাষিদের মুখে।”
সুতির আশিস ঘোষ বলছেন, ‘‘টাকার বিভ্রাটে এমনিতেই চাষিদের অবস্থা সঙ্গীন। ধানের দাম ৯০০ টাকাও উঠছে না। তাই নবান্নেও তার প্রভাব পড়েছে।”